পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

U) о е রবীন্দ্র-রচনাবলী আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে। এতবড়ো সৎপাত্রের কপালে এতবড়ো কলঙ্কের দাগ কোন নষ্টগ্রহ এত আলো জালাইয়া, বাজনা বাজাইয়া, সমারোহ করিয়া, জাকিয়া দিল ? বরষাত্ররা এই বলিয়া কপাল চাপড়াইতে লাগিল যে, বিবাহ হইল না অথচ আমাদের ফাকি দিয়া খাওয়াইয়া দিল— পাকযন্ত্রটাকে সমস্ত অল্পম্বন্ধ সেখানে টান মারিয়া ফেলিয়া দিয়া অভ্যালিতে পারিলে তবে জাফ সোশ মিটিত।’ বিবাহের চুক্তিভঙ্গ ও মানহানির দাবিতে নালিশ করিব বলিয়া মামা অত্যন্ত গোল করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন । হিতৈষীরা বুঝাইয়া দিল, তাহা হইলে তামাসার যেটুকু বাকি আছে তাহা পুরা হইবে । বলা বাহুল্য, আমিও খুব রাগিয়াছিলাম। কোনো গতিকে শম্ভুনাথ বিষম জবা হইয়া আমাদের পায়ে ধরিয়া আসিয়া পড়েন, গোফের রেখায় তা দিতে দিতে এইটেই কেবল কামনা করিতে লাগিলাম । কিন্তু, এই আক্রোশের কালো রঙের স্রোতের পাশাপাশি আর-একটা স্রোত বহিতেছিল যেটার রঙ একেবারেই কালো নয় । সমস্ত মন ষে সেই অপরিচিতার পানে ছুটিয়া গিয়াছিল— এখনো যে তাহাকে কিছুতেই টানিয়া ফিরাইতে পারি না । দেয়ালটুকুর আড়ালে রহিয়া গেল গো। কপালে তার চন্দন আঁকা, গায়ে তার লাল শাড়ি, মুখে তার লজ্জার রক্তিমা, হৃদয়ের ভিতরে কী যে তা কেমন করিয়া বলিব । আমার কল্পলোকের কল্পলতাটি বসন্তের সমস্ত ফুলের ভার আমাকে নিবেদন করিয়া দিবার জন্য নত হইয়া পড়িয়াছিল। হাওয়া আসে, গন্ধ পাই, পাতার শব্দ শুনি— কেবল আর একটিমাত্র পা-ফেলার অপেক্ষা— এমন সময়ে সেই এক পদক্ষেপের দূরত্বটুকু এক মুহূর্তে অসীম হইয়া উঠিল! এতদিন যে প্রতি সন্ধ্যায় আমি বিমুদার বাড়িতে গিয়া তাহাকে অস্থির করিয়া তুলিয়াছিলাম। বিমুদার বর্ণনার ভাষা অত্যন্ত সংকীর্ণ বলিয়াই তার প্রত্যেক কথাটি ফুলিঙ্গের মতো আমার মনের মাঝখানে আগুন জালিয়া দিয়াছিল। বুঝিয়াছিলাম, মেয়েটির রূপ বড়ো আশ্চর্ষ, কিন্তু না দেখিলাম তাহাকে চোখে, না দেখিলাম তার ছবি ; সমস্তই অস্পষ্ট হইয়া রহিল ; বাহিরে তো সে ধরা দিলই না, তাহকে মনেও আনিতে পরিলাম না— এইজন্ত মন সেদিনকার সেই বিবাহসভার দেয়ালটার বাহিরে ভূতের মতো দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বেড়াইতে লাগিল । হরিশের কাছে শুনিয়াছি, মেয়েটিকে আমার ফোটোগ্রাফ দেখানো হইয়াছিল। পছন্দ করিয়াছে বই-কি । না করিবার তো কোনো কারণ নাই। আমার মন বলে, সে ছবি তার কোনো-একটি বাক্সের মধ্যে লুকানো আছে। একলা ঘরে দরজা বন্ধ করিয়া এক