পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ లిపిd বাহুল্যের দ্বারা জগতে সে উৎপাতের স্থষ্টি করে। দুই-পা-ওয়ালা মামুষের বিধাতা এই আট-পা-ওয়ালা আকস্মিকটার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না। স্বভাবের স্বাস্থ্যকর নিয়মে এই অশ্বরথ ও সারথি সবাইকেই যথাসময়ে ভুলে বেতুম | কারণ, এই পরমাশ্চর্য জগতে এরা বিশেষ ক’রে মনে রাখবার জিনিস নয়। কিন্তু, প্রত্যেক মানুষের যে পরিমাণ গোলমাল করবার স্বাভাবিক বরাদ অাছে এরা তার চেয়ে ঢের বেশি জবর দখল করে বসে আছেন । এই জন্যে যদিচ ইচ্ছা করলেই আমার তিননম্বর প্রতিবেশীকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ভুলে থাকতে পারি কিন্তু আমার এই পয়লা-নম্বরের প্রতিবেশীকে এক মুহূর্ত আমার ভুলে থাকা শক্ত । রাত্রে তার আট-দশটা ঘোড়া আস্তাবলের কাঠের মেঝের উপর বিনা সংগীতের যে-তাল দিতে থাকে তাতে আমার ঘুম সর্বাঙ্গে টোল খেয়ে তুবড়ে যায়। তার উপর ভোরবেলায় সেই আট-দশটা ঘোড়াকে আট-দশটা সহিল যখন সশব্দে মলতে থাকে তখন সৌজন্য রক্ষণ করা অসম্ভব হয়ে দাড়ায় । তার পরে তার উড়ে বেহার, ভোজপুরি বেহার, তার পাড়ে তেওয়ারি দরোয়ানের দল কেউই স্বরসংযম কিম্বা মিতভাষিতার পক্ষপাতী নয়। তাই বলছিলুম, ব্যক্তিটি একটিমাত্র কিন্তু তার গোলমাল করবার যন্ত্র বিস্তর। এইটেই হচ্ছে দৈত্যের লক্ষণ । সেটা তার নিজের পক্ষে অশাস্তিকর না হতে পারে। নিজের কুড়িটা নাসারদ্ধে নাক ডাকবার সময় রাবণের হয়তো ঘুমের ব্যাঘাত হত না, কিন্তু তার প্রতিবেশীর কথাটা চিন্তা করে দেখো । স্বগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে পরিমাণস্বৰ্ষমা, অপর পক্ষে একদা য়ে-দানবের দ্বারা স্বর্গের নন্দনশোভা নষ্ট হয়েছিল তাদের প্রধান লক্ষণ ছিল অপরিমিতি । আজ সেই অপরিমিতি দানবটাই টাকার থলিকে বাহন ক’রে মানবের লোকালয়কে আক্রমণ করেছে। তাকে যদি-বা পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে যেতে চাই সে চার ঘোড়া হাকিয়ে ঘাড়ের উপর এসে পড়ে— এবং উপরন্তু চোখ রাঙায় । সেদিন বিকেলে আমার দ্বৈতগুলি তখনো কেউ আসে নি। আমি বসে বলে জোয়ার-ভাটার তত্ত্ব সম্বন্ধে একখানা বই পড়ছিলুম, এমন সময়ে আমাদের বাড়ির প্রাচীর ডিঙিয়ে, দরজা পেরিয়ে আমার প্রতিবেশীর একটা স্মারকলিপি কন্‌ঝন শব্দে আমার শার্সির উপর এসে পড়ল। সেটা একটি টেনিসের গোলা। চন্দ্রমার আকর্ষণ, পৃথিবীর নাড়ীর চাঞ্চল্য, বিশ্বগীতিকাব্যের চিরন্তন ছন্দতত্ত্ব প্রভৃতি সমস্তকে ছাড়িয়ে মনে পড়ল, আমার একজন প্রতিবেশী আছেন, এবং অত্যন্ত বেশি করে আছেন, আমার পক্ষে তিনি সম্পূর্ণ অনাবশুৰ অথচ নিরতিশয় অবশুম্ভাবী। পরক্ষণেই দেখি, আমার বুড়ো অযোধ্যা বেহরোটা দৌড়তে দৌড়তে হাপাতে হাপাতে এসে উপস্থিত। এই আমার একমাত্র অদ্ভুচর। একে ডেকে পাই নে, হেঁকে বিচলিত করতে পারি নে— দুর্লভভার কারণ