পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ \లిశివ আমি বললুম, “কানাই, আজ তোমরা একটু সকাল-সকাল এসো।” কানাই আশ্চর্য হয়ে বললে, “সে কী কথা। আজ আমাদের সভা হবে না কি ৷” আমি বললুম, “হবে বই-কি । সমস্ত তৈরি আছে– ম্যাক্সিম গর্কির নতুন গল্পের বই, বের্গদর উপর রাসেলের সমালোচনা, মাছের কচুরি, এমন-কি আমড়ার চাটুনি পর্যন্ত ।” 廳 কানাই অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। খানিক বাদে বললে, “অদ্বৈতবাবু, আমি বলি, আজ থাক।” অবশেষে প্রশ্ন করে জানতে পারলুম, আমার হালক সরোজ কাল বিকেল বেলায় আত্মহত্যা করে মরেছে। পরীক্ষায় সে পাশ হতে পারে নি, তাই নিয়ে বিমাতার কাছ থেকে খুব গঞ্জনা পেয়েছিল— সইতে না পেরে গলায় চাদর বেঁধে মরেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, “তুমি কোথা থেকে শুনলে ?” সে বললে, “পয়লা-নম্বর থেকে ৷” পয়লা-নম্বর থেকে ! বিবরণটা এই— সন্ধ্যার দিকে অনিলার কাছে যখন খবর এল তখন সে গাড়ি ডাকার অপেক্ষা না ক’রে অযোধ্যাকে সঙ্গে নিয়ে পথের মধ্যে থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাপের বাড়িতে গিয়েছিল। অযোধ্যার কাছ থেকে রাত্রে সিতাংশুমেীলী এই খবর পেয়েই তখনি সেখানে গিয়ে পুলিশকে ঠাণ্ড! ক’রে নিজে শ্মশানে উপস্থিত থেকে মৃতদেহের সৎকার করিয়ে দেন । ব্যতিব্যস্ত হয়ে তখনি অস্তঃপুরে গেলুম। মনে করেছিলুম, অনিল বুঝি দরজা বন্ধ করে আবার তার শোবার ঘরের আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু, এবারে গিয়ে দেখি, ভাড়ারের সামনের বারান্দায় বসে সে আমড়ার চাটুনির আয়োজন করছে। যখন লক্ষ্য করে তার মুখ দেখলুম তখন বুঝলুম, এক রাত্রে তার জীবনটা উলট-পালট হয়ে গেছে। আমি অভিযোগ করে বললুম, “আমাকে কিছু বল নি কেন।” সে তার বড়ো বড়ো দুই চোখ তুলে একবার আমার মুখের দিকে তাকালে— কোনো কথা কইলে না। আমি লজ্জায় অত্যন্ত ছোটো হয়ে গেলুম। যদি অনিল বলত ‘তোমাকে বলে লাভ কী’, তা হলে আমার জবাব দেবার কিছুই থাকত না। জীবনের এই-সব বিপ্লব— সংসারের স্থখ দুঃখ— নিয়ে কী ক'রে ষে ব্যবহার করতে হয়, আমি কি তার কিছুই জানি । আমি বললুম, “অনিল, এ-সব রাখে, আজ আমাদের সভা হবে না।” আনিলা আমড়ার খোলা ছাড়াবার দিকে দৃষ্টি রেখে বললে, “কেন হবে না। খুব হবে । আমি এত ক’রে সমস্ত আয়োজন করেছি, সে আমি নষ্ট হতে দিতে পারব না।” २७|२२