পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ *ළු8ක এমন সময়ে কোনো খবর না দিয়ে হঠাৎ বিশ্বপতির মেজো ছেলে শ্ৰীপতি ছাতে এসে উপস্থিত। তার সঙ্গে যে-আলোচনাটা হল, তার মর্ম এই-- শ্ৰীপতি দীপালিকে বিবাহ করবার আগ্রহে সমাজ ত্যাগ করতে প্রস্তুত । বাপ বলেন, এমন দুষ্কার্য করলে তিনি তাকে ত্যাগ করবেন । দীপালি বলে, তার জন্তে এত বড়ো দুঃখ অপমান ও ত্যাগ স্বীকার কেউ করবে, এমন ষোগ্যতা তার নেই। ভা ছাড়া শ্ৰীপতি শিশুকাল থেকে ধনীগৃহে লালিত ; দীপালির মতে, সে সমাজচু্যত এবং নিরাশ্রয় হয়ে দারিদ্র্যের কষ্ট সহ করতে পারবে না। এই নিয়ে তর্ক চলছে, কিছুতে তার মীমাংসা হচ্ছে না। ঠিক এই সংকটের সময় আমি মাঝখানে পড়ে এদের মধ্যে আর-একটা পাত্রকে খাড়া ক’রে সমস্তার জটিলতা অত্যন্ত বাড়িয়ে তুলেছি। এইজন্তে শ্ৰীপতি আমাকে এই নাটকের থেকে প্রাঙ্কশিটের কাটা অংশের মতো বেরিয়ে যেতে বলছে । আমি বললুম, “যখন এসে পড়েছি তখন বেরোচ্ছি নে। আর, যদি বেরোই তা হলে গ্রন্থি কেটে তবে বেরিয়ে পড়ব ।” বিবাহের দিনপরিবর্তন হল না। কেবলমাত্র পাত্ৰপরিবর্তন হল । বিশ্বপতির আমুনয় রক্ষা করেছি কিন্তু তাতে তিনি সন্তুষ্ট হন নি । দীপালির অনুনয় রক্ষা করি নি কিন্তু ভাবে বোধ হল, সে সন্তুষ্ট হয়েছে। ইস্কুলে কাজ খালি ছিল কিনা জানি নে কিন্তু আমার ঘরে কন্যার স্থান শূন্ত ছিল, সেটা পূর্ণ হল । আমার মতো বাজে লোক যে নিরর্থক নয় আমার অর্থই সেটা শ্ৰীপতির কাছে প্রমাণ করে দিলে। তার গৃহদীপ আমার কলকাতার বাড়িতেই জলল । ভেবেছিলুম, সময়মতো বিবাহ না সেরে রাখার মুলতবি অসময়ে বিবাহ করে পূরণ করতে হবে, কিন্তু দেখলুম, উপর ওয়ালা প্রসন্ন হলে দুটো-একটা ক্লাস ডিঙিয়েও প্রোমোশন পাওয়া যায় । আজ পঞ্চায় বছর বয়সে আমার ঘর নাতনিতে ভরে গেছে, উপরন্তু একটি নাতি ও জুটেছে। কিন্তু, বিশ্বপতি বাবুর সঙ্গে আমার কারবার বন্ধ হয়ে গেছে— কারণ, তিনি পাত্রটিকে পছনা করেন নি । পৌষ, ১৩২৪