পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Өа о রবীন্দ্র-রচনাবলী করিত তবে যিনি বিশ্ব স্বষ্টি করিয়াছেন গোড়ায় তারই মুখ বন্ধ করিয়া দিতে হয়। সামান্ত কবির উপরে রাগ করায় বাহাদুরি নাই। কেন, স্বষ্টিকর্তা বলেন কী । তিনি আর যাই বলুন, লড়াইয়ের কথাটা যত পারেন চাপা দেন। মানুষের বিজ্ঞান বলিতেছে, জগৎ জুড়িয়া অণুতে পরমাণুতে লড়াই। কিন্তু, আমরা যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে তাকাইয়া দেখি, সেই যুদ্ধ-ব্যাপার ফুল হইয়া ফোটে, তার হইয়া জলে, নদী হইয়া চলে, মেঘ হইয়া ওড়ে। সমস্তটার দিকে সমগ্রভাবে যখন দেখি তখন দেখি, ভূমার ক্ষেত্রে স্বরের সঙ্গে স্বরের মিল, রেখার সঙ্গে রেখার যোগ, রঙের সঙ্গে রঙের মালাবদল । বিজ্ঞান সেই সমগ্র হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দলাদলি ঠেলাঠেলি হানাহানি দেখিতে পায়। সেই অবচ্ছিন্ন সত্য বিজ্ঞানের সত্য হইতে পারে, কিন্তু তাহা কবির সত্য ও নহে, কবিগুরুর সত্যও নয় । অন্ত কবির কথা রাখিয়া দাও, তুমি নিজের হইয়া বলে । আচ্ছা, ভালো । তোমাদের নালিশ এই যে, খেল, ছুটি, আনন্দ, এই-সব কথা আমার কাব্যে বারবার আসিয়া পড়িতেছে। কথাটা যদি ঠিক হয় তবে বুঝিতে হইবে, একটা কোনো সত্যে আমাকে পাইয়াছে । তার হাত আমার আর এড়াইবার জো নাই । অতএব, এখন হইতে আমি বিধাতার মতোই বেহায় হইয়া এক কথা হাজার বার বলিব। যদি আমাকে বানাইয়া বলিতে হইত তবে ফি বারে নূতন কথা না বলিলে লজ্জা হইত। কিন্তু, সত্যের লজ্জা নাই, ভয় নাই, ভাবনা নাই। লে নিজেকেই প্রকাশ করে ; নিজেকেই প্রকাশ করা ছাড়া তার আর গতি নাই, এইজন্তই সে বেপরোয়া । এটা যেন তোমার অহংকারের মতো শোনাইতেছে । সত্যের দোহাই দিয়া নিন্দ করিলে যদি দোষ না হয়, তবে সত্যের দোহাই দিয়া ংকার করিলেও দোষ নাই । অতএব, এখানে তোমাতে আমাতে শোধবোধ হইল । বাজে কথা আসিল । যে-কথা লইয়া তর্ক হুইতেছিল সেট— সেটা এই যে, জগতে শক্তির লড়াইটাকেই প্রধান করিয়া দেখা অবচ্ছিন্ন দেখা— অর্থাৎ গানকে বাদ দিয়া স্বরের কসরতকে দেখা। আনন্দকে দেখাই সম্পূর্ণকে দেখা। এ কথা আমাদেরই দেশের সবচেয়ে বড়ো কথা। উপনিষদের চরম কথাটি এই যে, আনন্দাদ্ধ্যেব খম্বিমানি ভূতানি জায়স্তে, আনন্দেন জাতানি জীবস্তি, আনন্দং সম্প্রয়স্ত্যভিসংবিশস্তি । আনন্দ হতেই সমস্ত উৎপন্ন হয়, সমস্ত বাচে, আনন্দের দিকেই সমস্ত চলে ।