পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্যহিত্যের পথে 8 o’e রসনাও মুহূর্তের মধ্যে সাদরে স্বীকার করে নিতে বাধা পায় না। শরৎ চাটুজের গল্পটা বাঙালির,কিন্তু গল্প বলাট। একান্ত বাঙালির নয় ; সেইজন্তে র্তার গল্প-সাহিত্যের জগন্নাথক্ষেত্রে জাত-বিচারের কথ। উঠতেই পারে না । গল্প-বগার সর্বজনীন আদর্শটাই ফলা ৪ ত্রে সকল লোককে ডাক দিয়ে আনে। সেই আদর্শটা খাটো হলেই নিমন্ত্রণটা ছোটো হয় ; সেটা পারিবারিক ভোজ হতে পারে, স্বজাতের ভোজ হতে পারে, কিন্তু সাহিত্যের ষে-তীর্থে সকল দেশের যাত্রী এসে মেলে সে-তীর্থের মহাভোজ হবে না। কিন্তু, মাকুবের কানের কাছে সর্বদাই যারা ভিড় ক’রে থাকে, যাদের ফরমাশ সবচেয়ে চড়া গলায়, তাদের পাতে জোগান দেবার ভার নিভে গেলেই ঠকতে হবে ; তারা গাল পাড়তে থাকলেও তাদের এড়িয়ে যাবার মতো মনের জোর থাকা চাই । যাদের চিত্ত অভ্যস্ত ক্ষণকালবিহারী, যাদের উপস্থিত গরজের দাবি অত্যন্ত উগ্র, তাদেরই হটগোল সব-চেয়ে বেশি শোনা যায়। সকালবেলার স্বৰ্ধালোকের চেয়ে বেশি দৃষ্টিতে পড়ে ষে-আলোট ল্যাম্প-পেন্টের উপরকার কাচফলক থেকে ঠিকরে চোখে এসে বেঁধে । আবদারের প্রাবল্যকেই প্রামাণ্য মনে করার বিপদ আছে । যে-লেখকের অন্তরেই বিশ্বশ্রোভার অtলন তিনিই বাইরের শ্রোতার কাছ থেকে নগদ ৰিদায়ের লোভ সামলাতে পারেন । ভিতরের মহানীরব যদি তাকে বরণমালা দেয় তা হলে তার আর ভাবনা থাকে না, তা হলে বাইরের নিত্যমুখরকে তিনি দূর থেকে নমস্কার ক’রে নিরাপদে চলে যেতে পারেন । ইংরেজি শিক্ষার গোড়াতেই আমরা ঘে-সাহিত্যের পরিচয় পেয়েছি তার মধ্যে বিশ্ব-সাহিত্যের আদর্শ ছিল এ কথা মানতেই হবে । কিন্তু, তাই ব’লে এ কথা বলতে পারব না যে, এই আদর্শ যুরোপে সকল সময়েই সমান উজ্জল থাকে । সেখানে ও কখনো কখনে। গরজের ফরমাশ যখন অত্যন্ত বড়ো হয়ে ওঠে তখন সাহিত্যে খর্বভার দিন আসে। তখন ইকনমিক্‌সের অধ্যাপক, বায়োলজির লেকচারার, সোলিমুলজির গোল্ড, মেডালিস্ট, সাহিত্যের প্রাঙ্গণে ভিড় ক’রে ধরনা দিয়ে বলেন। সকল দেশের সাহিত্যেই দিন একটানা চলে না ; মধ্যাহ্ন পেরিয়ে গেলেই বেলা পড়ে আসতে থাকে। আলো যখন ক্ষীণ হয়ে আসে তখনি অভূতের প্রাদুর্ভাব হয়। অন্ধকারের কালট হচ্ছে বিকৃতির কাল । তখন অলিতে-গলিতে আমরা কন্ধকাটাকে দেখতে পাই, আর তার কুৎসিত কল্পনাটাকেই একাঙ্ক ক’রে তুলি । বস্তুত সাহিত্যের সায়াহ্নে কল্পনা ক্লাস্ত হয়ে আসে ব’লেই তাকে বিকৃতিতে পেয়ে বলে ; কেননা, বা-কিছু সহজ তাতে তার আর সানায় না। বে-অক্লিষ্ট শক্তি থাকলে আনন্দসভোগ স্বভাবতই সম্ভবপর সেই শক্তির ক্ষীণতায় উত্তেজনার প্রয়োজন ঘটে । २७|२१