পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ஆ. সাহিত্যেরূপৰে 86S আমাদের দরজার সামনে রাস্ত দিয়ে তোমাকে যেতে দেখেছিলুম, সেখানে তোমার পায়ের চিহ্ন সবুজ খাওলায় চাপা পড়ল— সে খাওলা এত ঘন যে ঝাঁট দিয়ে সাফ করা যায় না। অবশেষে শরতের প্রথম হাওয়ায় তার উপরে জমে উঠল ঝরা পাতা । এখন অষ্টম মাস, হলদে প্রজাপতিগুলো আমাদের পশ্চিম-বাগানের ঘাসের উপর ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। আমার বুক যে ফেটে যাচ্ছে, ভয় হয় পাছে আমার রূপ যায় মান হয়ে । ওগো, যখন তিনটে জেলা পার হয়ে তুমি ফিরবে আগে থাকতে আমাকে খবর পাঠাতে ভুলো না। চাঙফেঙ শার দীর্ঘ পথ বেয়ে আমি আসব, তোমার সঙ্গে দেখা হবে। দূর বলে একটুও ভয় করব না। এই কবিতায় সেণ্টিমেন্টের স্বর একটু ও চড়ানো হয় নি, তেমনি তার পরে বিদ্রুপ বা অবিশ্বাসের কটাক্ষপাত দেখছি নে। বিষয়টা অত্যন্ত প্রচলিত, তৰু এতে রসের অভাব নেই। স্টাইল বেঁকিয়ে দিয়ে একে ব্যঙ্গ করলে জিনিসটা আধুনিক হত। কেননা, সবাই যাকে অনায়াসে মেনে নেয় আধুনিকের কাব্যে তাকে মানতে অবজ্ঞা করে। খুব সম্ভব, আধুনিক কবি ঐ কবিতার উপসংহারে লিখত, স্বামী চোখের জল মুছে পিছন ফিরে তাকাতে তাকাতে চলে গেল, আর মেয়েটি তখনি লাগল শুকনো চিংড়িমাছের বড় ভাজতে । কার জন্তে । এই প্রশ্নের উত্তরে থাকত দেড় লাইন ভরে ফুটুকি । সেকেলে পাঠক জিজ্ঞাসা করত, "এটা কী হল। একেলে কবি উত্তর করত, এমনতরো হয়েই থাকে । ‘অন্তটাও তো হয়।’ ‘হয় বটে, কিন্তু বড়ো বেশি ভদ্র । কিছু দুৰ্গন্ধ না থাকলে ওর শৌখিন ভাব ঘোচে না, আধুনিক হয় না।’ সেকালে কাব্যের ৰাৰুগিরি ছিল, সৌজন্যের সঙ্গে জড়িত। একেলে কাব্যেরও বাবুগিরি আছে, সেট পচা মাংসের বিলাসে । চীনে কবিতাটির পাশে বিলিতি কবিদের আধুনিকতা সহজ ঠেকে না। সে জাবিল। তাদের মনটা পাঠককে কচুই দিয়ে ঠেলা মারে। তারা ষে-বিশ্বকে দেখছে এবং দেখাচ্ছে সেটা ভাঙন-ধর, রাবিশ-জমা, ধুলো-ওড়া। ওদের চিত্ত যে আজ অস্থস্থ, অস্বর্থী, অব্যবস্থিত। এ অবস্থায় বিশ্ববিষয় থেকে ওরা বিশুদ্ধভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারে না। ভাঙা প্রতিমার কাঠ খড় দেখে ওরা অট্টহাস্ত করে ; বলে, আসল জিনিসটা এতদিনে ধরা পড়েছে। সেই ঢেল, সেই কাঠখড়গুলোকে খোচা মেরে কড়া কথা বলাকেই ওরা বলে থাটি সত্যকে জোরের সঙ্গে স্বীকার করা।