পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে 88Ꮌ লক্ষপতির ঘরে মেজো মেয়ের বিবাহ। এমন ধুম পাড়ার অতিবৃন্ধেরাও বলে অভূতপূর্ব । তার ঘোষণার তরঙ্গ খবরের কাগজের সংবাদবীথিকায় উদবেল হয়ে উঠেছে । জনশ্রুতির ৰোলাহলে ঘটনাট যতই গুরুতর প্রতিভাত হোক, তবু এই বহুব্যয়সাধ্য বিপুল সমারোহেও ব্যাপারটাকে ‘মেয়ের বিয়ে নামক সংবাদের নিতান্ত সাধারণভা থেকে উপরে তুলতে পারে না। সাময়িক উন্মুখরতার জোরে এ স্মরণীয় হয়ে ওঠে না । কিন্তু, ‘কস্তার বিবাহ’ নামক অত্যন্ত সাধারণ ঘটনাকে তার সাময়িক ও স্থানিক আত্মপ্রচারের আগুমানতা থেকে যদি কোনো কবি তার ভাষায় ছন্দে দীপ্তিমান সাহিত্যের সামগ্রী করে তোলেন, তা হলে প্রতিদিনের হাজার-লক্ষ মেয়ের বিবাহের কুহেলিকা ভেদ ক’রে এ দেখা দেবে একটি অদ্বিতীয় মেয়ের বিবাহরূপে, যেমন বিবাহ কুমারসম্ভবের উমার, যেমন বিবাহ রঘুবংশের ইন্দুমতীর । সাংকোপাঞ্জা ভনকুইক্সোটের তৃত্যমাত্র, সংসারের প্রবহমান তথ্যপুঞ্জের মধ্যে তাকে তর্জমা করে দিলে সে চোখেই পড়বে না— তখন হাজার-লক্ষ চাকরের সাধারণ-শ্রেণীর মাঝখানে তাকে সনাক্ত করবে কে। ডনকুইকসোটের চাকর আজ চিরকালের মানুষের কাছে চিরকালের চেনা হয়ে আছে, সবাইকে দিচ্ছে তার একান্ত প্রত্যক্ষতার আনন্দ ; এপর্যন্ত ভারতের যতগুলি বড়লাট হয়েছে তাদের সকলের জীবনবৃত্তান্ত মেলালেও এই চাকরটির পাশে তার নিম্প্রভ । বড়ো বড়ো বুদ্ধিমান রাজনীতিকের দল মিলে অস্ত্রলাঘব ব্যাপার নিয়ে ষে বাজবিতও তুলেছেন তথ্যহিসাবে সে একটা মস্ত তথ্য ; কিন্তু যুদ্ধে-পঙ্গু একটিমাত্র লৈনিকের জীবন যে-বেদনায় জড়িত তাকে স্বম্পষ্ট প্রকাশমান করতে পারলে সকল কালের মানুষ রাষ্ট্রনীতিকের গুরুতর মন্ত্রণা-ব্যাপারের চেয়ে তাকে প্রধান স্থান দেবে। এ কথা নিশ্চিত জানি, ষে-সময়ে শকুন্তলা রচিত হয়েছিল তখন রাষ্ট্রক আর্থিক অনেক সমস্ত উঠেছিল ষার গুরুত্ব তখনকার দিনে অতি প্রকাও উদবেগন্ধপে ছিল ; কিন্তু সে-সমস্তের আজ চিহ্নমাত্র নেই, আছে শকুন্তলা । মানবের সামাজিক জগৎ দু্যলোকের ছায়াপথের মতো। তার অনেকখানিই নানাবিধ অবচ্ছিন্ন তত্বের অর্থাৎ অ্যাবস্ট ক্শিনের বহুবিস্তৃত নীহারিকায় অবকীর্ণ; তাদের নাম হচ্ছে সমাজ, রাষ্ট্র, নেশন, বাণিজ্য, এবং আরও কত কী । তাদের রূপহীনতার কুহেলিকায় ব্যক্তিগত মানবের বেদনাময় বাস্তবতা আচ্ছন্ন। যুদ্ধ-নামক একটিমাত্র বিশেষ্যের তলায় হাজার হাজার ব্যক্তিবিশেষের হৃদয়দাহকর দুঃখের জলন্ত অজার বাস্তবতার অগোচরে ভষ্মাবৃত । নেশন-নামক একটা শৰ চাপা দিয়েছে যত পাপ ও বিভীষিকা তার জাৰয়ণ তুলে দিলে মানুষের জন্তে লজ্জা রাখবার জায়গা থাকে না। সমাজ-নামক পদার্থ যত বিচিত্র রকমের মুঢ়তা ও দাসত্বশৃঙ্খল গড়েছে তার স্পষ্টতা