পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃ8 臀 রবীন্দ্র-রচনাবলী যুরোপে এক সময়ে লাটিন ভাষা জ্ঞানচর্চার একমাত্র সাধারণ ভাষা ছিল । যতদিন তা ছিল ততদিন য়ুরোপের ঐক্য ছিল বাহিক আর অগভীর। কিন্তু, আজকার দিনে যুরোপ নানা বিস্তাধারার সম্মিলনের দ্বারা ৰে-মহত্ব লাভ করেছে সেটি আজ পর্বস্তু অন্ত কোনো মহাদেশে ঘটে নি। এই ভিন্ন-ভিন্ন-দেশীয় বিদ্যার নিরস্তর সচল সম্মিলন কেবলমাত্র যুরোপের নানা দেশের নানা ভাষার ৰোগেই ঘটেছে, এক ভাবার দ্বারা কখনও ঘটতে পারত না। আজকার দিনে যুরোপে রাষ্ট্ৰীয় আসাম্যের অন্ত নেই কিন্তু তার বিস্তার সাম্য আজও প্রবল। এই জ্ঞান-সম্মিলনের উজ্জ্বলতায় দিক্‌বিদিক অভিভূত হয়ে গেছে। সেই মহাদেশে দেয়ালি-উৎসবের যে বিরাট আয়োজন হয়েছে তা সমাধা করতে সেখানকার প্রত্যেক দেশ তার দীপশিখাটি জালিয়ে এনেছে। ৰেখানে যথার্থ মিলন সেইখানেই যথার্থ শক্তি। আজকের দিনে যুরোপের যথার্থ শক্তি তার জ্ঞানসমবায়ে । আমাদের দেশেও সেই কথাটি মনে রাখতে হবে । ভারতবর্ষে আজকাল পরস্পরের ভাবের আদানপ্রদানের ভাষা হয়েছে ইংরাজি ভাষা। অন্ত একটি ভাষাকেও ভারতব্যাপী মিলনের বাহন করবার প্রস্তাব হয়েছে। কিন্তু, এতে করে যথার্থ সমন্বয় হতে পারে না ; হয়তো একাকারত্ব হতে পারে, কিন্তু একত্ব হতে পারে না । কারণ, এই একাকারত্ব কৃত্রিম ও অগভীর, এ শুধু বাইরে থেকে দড়ি দিয়ে বাধা মিলনের প্রয়াস মাত্র। যেখানে হৃদয়ের বিনিময় হয়, সেখানে স্বাতন্ত্র্য বা বৈশিষ্ট্য থাকলেই তবে যথার্থ মিলন হতে পারে। কিন্তু, যদি বাহ বন্ধনপাশের দ্বারা মানুষকে মিলিত করতে বাধ্য করা যায়, তবে তার পরিণাম হয় পরম শত্রুত। কারণ, সে মিলন শৃঙ্খলের মিলন, অথবা শৃঙ্খলার মিলনমাত্র । রাশিয়া তার অধিকৃত ছোটো ছোটো দেশের ভাষাকে মেরে রাণীয় ভাষার অধিকারভূক্ত করবার চেষ্টা করেছিল, বেলজিয়ান ফ্লেমিশ দের ভাষা ভোলাতে পারলে বঁাচে । কিন্তু, ভাষার অধিকার যে ভৌগোলিক অধিকারের চেয়ে বড়ে, তাই এখানে জবরদস্তি খাটে না । বেলজিয়াম ফ্লেমিশ দের অনৈক্য সইতে পারে নি, তাই রাষ্ট্রীয় ঐক্যবদ্ধনে তাদের বাধতে চেয়েছে। কিন্তু, সে-ঐক্য অগভীর বলে তা স্থায়ী ভিত্তির উপর দাড়াতে পারে না। সাম্রাজ্যবন্ধনের দোহাই দিয়ে যে-ঐক্যসাধনের চেষ্টা তা বিষম বিড়ম্বনা। আজ যুরোপের বড়ো বড়ো দাগব্যবসায়ী নেশনরা আপন অধীন গণবর্গকে এক জোয়ালে জুড়ে দিয়ে বিষম ক্যাঘাত করে তার ইস্পীরিয়ালিজমের রথ চালিয়ে দিয়েছে। রথের বাহন যে-ঘোড়াকয়টি তাদের পরস্পরের মধ্যে কোনো জাষ্ট্ৰীয়তা নেই। কিন্তু, সারথির তাতে আসে যায় না। তার মন রয়েছে এগিয়ে চলার দিকে, তাই সে রথের ঘোড়াকটাকে