পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে । 8եrծ দেবার জন্তে প্রস্তুত স্বদেশের আতিথ্য এইখানে অকৃপণ এই সভার সভ্যদের কাছে আমার পরিচয় অস্তুত ঔদাসীন্তের দ্বারা ক্ষুণ্ণ হবে না। দেশবিদেশে আমার সম্মানের বিবরণ আমার বন্ধু এইমাত্র বর্ণনা করেছেন। বাইরের দিক থেকে বিদেশের কাছে আমার পরিচয় পরিমাণ-হিসাবে অতি অল্প । আমার লেখার সামান্ত এক অংশের তরজমা তাদের কাছে পৌচেছে, সে তরজমারও অনেকখানি যথেষ্ট স্বচ্ছ নয়। কিন্তু সাহিত্যে, কলারচনায়, পরিমাণের হিসাবট। বড়ো হিসাব নয়, সে ক্ষেত্রে অল্প হয়তো বেশির চেয়ে বেশি হ’তেও পারে । সাহিত্যকে ঠিক ভাবে ষে দেখে সে মেপে দেখে না, তলিয়ে দেখে ; লম্ব পাড়ি দিয়ে সাতার না কাটলেও তার চলে, সে ডুব দিয়ে পরিচয় পায়, সেই পরিচয় অন্তরতর। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা ঐতিহাসিক তথ্যের জন্তে পরিমাণের দরকার, স্বাদের বিচারের জন্তে এক গ্রাসের মূল্য দুই গ্রাসের চেয়ে কম নয় । বস্তুত এই ক্ষেত্রে অধিক অনেক সময়ে স্বল্পের শক্ৰ হয়ে দাড়ায় ; অনেককে দেখতে গিয়ে যে চিত্তবিক্ষেপ ঘটে তাতে এককে দেখবার বাধা ঘটায় । রসসাহিত্যে এই এককে দেখাই আসল দেখা । একজন যুরোপীয় আর্টিস্ট কে একদিন বলেছিলুম যে, ইচ্ছা করে ছবি অঁাকার চর্চা করি, কিন্তু আমার দৃষ্টি ক্ষীণ বলে চেষ্টা করতে সাহল হয় না। তিনি বললেন, “ও ভয়ট কিছুই নয়, ছবি অঁাকতে গেলে চোখে একটু কম দেখাই দরকার ; পাছে অতিরিক্ত দেখে ফেলি এই আশঙ্কায় চোখের পাতা ইচ্ছে ক’রেই কিছু নামিয়ে দিতে হয় । ছবির কাজ হচ্ছে সার্থক দেখা দেখানে ; যারা নিরর্থক অধিক দেখে তারা বস্ত দেখে বেশি, ছবি দেখে কম।” দেশের লোক কাছের লোক—তাদের সম্বন্ধে আমার ভয়ের কথাটা এই যে, তারা আমাকে অনেকখানি দেখে থাকেন, সমগ্রকে সার্থককে দেখা তাদের পক্ষে ছুঃসাধ্য হয়ে পড়ে । আমার নানা মত আছে, নানা কর্ম আছে, সংসারে নানা লোকের সঙ্গে আমার নানা সম্বন্ধ আছে ; কাছের মামুষের কোনো দাবি আমি রক্ষা করি, কোনো দাবি আমি রক্ষা করতে অক্ষম ; কেউ-ৰা আমার কাছ থেকে তাদের কাজের ভাবের চম্ভার সম্মতি বা সমর্থন পান কেউ-বা পান না, এই সমস্তকে জড়িয়ে আমার পরিচয় তাদের কাছে নানাখানা হয়ে ওঠে— নানা লোকের ব্যক্তিগত রুচি, অনভিরুচি ও রাগদ্বেষের ধূলি নিবিড় আকাশে আমি দৃশ্যমান। যে-দূরত্ব দৃপ্ততার অনাবশুক আতিশয্য সরিয়ে দিয়ে দৃষ্টিবিষয়ের সত্যকে স্পষ্ট করে তোলে, দেশের লোকের চোখের সামনে সেই দূরত্ব স্থলভ । মুক্তকালের আকাশের মধ্যে সঞ্চরণশীল বে-সভ্যকে দেখা আবগুক, নিকটের লোক সেই সত্যকে প্রায়ই একান্ত বর্তমান কালের জালপিন দিয়ে রুদ্ধ করে ধরে ; ২৩|৩২