পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6 o 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ব্যক্ত করেছি। সাহিত্যের মূলতত্ত্ব সম্বন্ধে, নীতি সম্বন্ধে, যা বক্তব্য সে আমার লেখায় বারবার বলেছি। গত বারে সে কথা কিছু কিছু আলোচিত হয়েছে। এখনকার যারা তরুণ সাহিত্যিক তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, আমি কেন তাদের বিরুদ্ধে লিখেছিলাম কিম্বা তাদের মতের প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি জানি, আমি কোনো ব্যক্তিবিশেষকে উপলক্ষ্য করে লিখি নি। কতকগুলি লেখা আমার চোখে পড়েছিল যেগুলিকে সাহিত্যধর্ম-বিগর্হিত মনে হয়েছিল । তাতে সমাজধর্মের যদি কোনো ক্ষতি করে থাকে, সমাজরক্ষার ব্রত যারা নিয়েছেন তারা সে-বিষয়ে চিস্তা করবেন ; আমি লে-দিক থেকে কখনো আলোচনা করি নি। আমি দেখাবার চেষ্টা করেছি, মানুষ যে-সকল মনের স্বষ্টিকে চিরন্তন মূল্য দিয়ে থাকে, চিরকাল রক্ষা করবার যোগ্য ও গৌরবের বিষয় বলে মনে করে, তাকে সাহিত্যে এবং আর্টে চিরকালের ভাষায়, চিরকালের চিত্রে চিত্রিত করে । আমাদের সব সাহিত্যের গোড়াতেই যে-মহাকাব্য, স্পষ্টই দেখি, তার লক্ষ্য মানুষের দৈন্ত প্রচার, মামুষের লজ। ঘোষণা করা নয়— তার মাহাত্ম্য স্বীকার করা। সংসারধর্মে মানবচরিত্রে সত্যের সেই-সব প্রকাশকে তারা চিরকালের মূল্য দিয়েছেন, যাকে তারা সর্বকাল ও সর্বজনের কাছে ব্যক্ত করবার ও রক্ষা করবার যোগ্য মনে করেছেন। যার মধ্যে তারা সৌন্দৰ দেখেছেন, মহিমা দেখেছেন, তাই তাদের রচনার আনন্দকে জাগিয়েছে। বাল্মীকি যেদিন ছন্দ পেলেন সেদিন অনুভব করলেন, এ ছন্দ কোনো মহৎ চরিত্র, কোনো পরম অনুভূতি প্রকাশ করবার জন্তে, এমন কিছু যাতে মানবজীবনের পূর্ণত, যাতে তার গৌরব। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি, তখনকার লোক মন্থন্তত্বের কোন রূপকে শ্রেষ্ঠ বলে জানতেন। কলাবান বাক্য ষে-বিষয়কে প্রকাশ করে তাকে আপন অলংকারের দ্বারা স্থায়ী মূল্য দেয়। সেকালের কবি খুব প্রকাও পটের উপর খুব বড়ো ছবি এঁকেছেন এবং তাতে মাহুষকে বড়ো দেখে মাকুব আনন্দ পেয়েছে । আমাদের মনের ভিতর যে-সব বেদন, যে-সব আকাঙ্ক্ষা থাকে এবং আমরা যাকে অন্তরে অন্তরে খুব আদর করি, সেই আদরের যোগ্য ভাষা পাই না বলে বাইরে প্রকাশ করতে পারি না, পূজা করতে পারি না, অর্ঘ্য দিতে পারি না । আমাদের সে-সম্পদ নেই, আমরা মন্দির রচনা করতে জানি না, ধারা রচনা করেন ও ধারা দেবতার প্রতিষ্ঠা করেন আমরা তাদের কাছ থেকে স্বযোগ গ্রহণ করে আমাদের পূজা সেখানে দিই। বড়ো বড়ো জাতি সাহিত্যে বড়ো বড়ো পূজার জভে জামাদের অবকাশ রচনা করে দিয়েছেন। সমস্ত মানুষ সেখানে তাদের অর্ঘ্য নিয়ে যাবার স্বৰোগ লাভ করে তাদের কাছে