পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6:ՖԵ- রবীন্দ্র-রচনাবলী নিরবচ্ছিন্ন বেড়ে চলছিল। এই সমৃদ্ধির সঙ্গে শাস্তি চিরকালের জন্তে বাধা, এই ছিল তার বিশ্বাস । মোটা মোটা লোহার সিন্ধুকগুলোকে কোনো-কিছুতে নড় চড়, করতে পারবে, এ কথা সে ভাবতেই পারে নি। এইজন্ত একঘেয়ে উৎকর্ষের বিরুদ্ধে অনিবার্ষ চাঞ্চল্যকে সে-দিনের মাস্থ্য ঐ লোহার সিন্ধুকের ভরসায় দমন করবার চেষ্টায় ছিল । এমন সময় হাওয়ায় এ কী পাগলামি জাগল। একদিন অকালে হঠাৎ জেগে উঠে সবাই দেখে, লোহার সিন্ধুকে সিন্ধুকে ভয়ংকর মাথা-ঠোকাঠুকি ; বহুদিনের স্বরক্ষিত শাস্তি ও পুস্ত্রীভূত সম্বল ধুলোয় ধুলোয় ছড়াছড়ি ; সম্পদের জয়তোরণ তলার উপর তলা গেঁথে ইন্দ্রলোকের দিকে চুড়া তুলেছিল, সেই ঔদ্ধত্য ধরণীর ভারাকর্ষণ সইতে পারল না, এক মুহূর্তে হল ভূমিসাৎ ৷ পুষ্টদেহধারী তুষ্টচিত্ত পুরাতনের মর্যাদা আর রইল না। নূতন যুগ আলুখালু বেশে অত্যন্ত হঠাৎ এসে পড়ল, তাড়াহুড়ো বেধে গেল, গোলমাল চলছে— সাবেক কালের কর্তব্যক্তির ধমকানি আর কানে পৌছায় না। অস্থায়িত্বের এই ভয়ংকর চেহারা অকস্মাৎ দেখতে পেয়ে কোনো-কিছুর স্থায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা লোকের একেবারে আলগা হয়ে গেছে । সমাজে সাহিত্যে কলারচনায় অবাধে নানাপ্রকারের অনাস্থষ্টি শুরু হল । কেউ বা ভয় পায়, কেউ বা উৎসাহ দেয়, কেউ বলে ‘ভালো মানুষের মতো থামো, কেউ বলে ‘মীয়া হয়ে চলো’। এই যুগান্তরের ভাঙচুরের দিনে যারা নূতন কালের নিগৃঢ় সত্যটিকে দেখতে পেয়েছেন ও প্রকাশ করছেন তারা যে কোথায়, তা এই গোলমালের দিনে কে নিশ্চিত করে বলতে পারে। কিন্তু, এ কথা ঠিক যে, যে-যুগ পঞ্চাশ পেরিয়েও তক্ত আঁকড়ে গদিয়ান হয়ে বসে ছিল, নূতনের তাড়া খেয়ে লোটাকম্বল হাতে বনের দিকে সে দৌড় দিয়েছে। সে ভালো কি এ ভালো সে তর্ক তুলে ফল নেই; আপাতত এই কালের শক্তিকে সার্থক করবার উপলক্ষে নানা লোকে নব নব প্রণালীর প্রবর্তন করতে বসল। সাবেক প্রণালীর সঙ্গে মিল হচ্ছে না ব'লে যার উদবেগ প্রকাশ করছে তারাও ঐ পঞ্চাশোধের দল, বনের পথ ছাড়া তাদের গতি নেই। তাই বলছিলেম, ব্যক্তিগত হিসাবে যেমন পঞ্চাশোধৰ্ম আছে, কালগত ছিলাৰেও তেমনি। সময়ের সীমাকে যদি অতিক্রম করে থাকি তৰে সাহিত্যে অসহিষ্ণুতা মথিত হয়ে উঠবে। নবাগত ধারা তার যে-পর্যন্ত নবযুগে নূতন আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করে নিজের প্রতিষ্ঠালাভ না করবেন সে-পৰম্ভ শান্তিহীন সাহিত্য কলুবলিপ্ত