পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ునby রবীন্দ্র-রচনাবলী তুমি আমাকে আলোয় দেখা দিচ্ছ না কেন ? தி রাজা । আলোয় তুমি হাজার হাজার জিনিসের সঙ্গে মিশিয়ে আমাকে দেখতে চাও ? এই গভীর অন্ধকারে আমি তোমার একমাত্র হয়ে থাকি না কেন ? সুদৰ্শনা । সবাই তোমাকে দেখতে পায়, আমি রানী হয়ে দেখতে পাব না ? রাজা । কে বললে দেখতে পায় ? মূঢ় যারা তারা মনে করে দেখতে পাচ্ছি। সুদৰ্শন । তা হ’ক, আমাকে দেখা দিতেই হবে। রাজা । সহ করতে পারবে না—কষ্ট হবে । সুদৰ্শন। সহ হবে না—তুমি বল কী ! তুমি যে কত সুন্দর কত আশ্চর্য তা এই অন্ধকারেই বুঝতে পারি, আর আলোতে বুঝতে পারব না ? বাইরে যপন তোমার বীণা বাজে তখন আমার এমনি হয় যে, আমার নিজেকে সেই বীণার গান বলে মনে হয়। তোমার ওই সুগন্ধ উত্তরীয়ট যখন আমার গায়ে এসে ঠেকে তখন আমার মনে হয়, আমার সমস্ত অঙ্গটা বাতাসে ঘন আনন্দের সঙ্গে মিলে গেল ! তোমাকে দেপলে আমি সইতে পারব না এ কী কথা ! রাজা । আমার কোনো রূপ কি তোমার মনে আসে না ? সুদৰ্শন এক রকম করে আসে বই কি ! নইলে বঁচিব কী করে ? রাজা । কী রকম দেখেছ ? সুদৰ্শন । সে তো একরকম নয় ! নববর্ষার দিনে জলভরা মেঘে আকাশের শেষ প্রাস্তে বনের রেখা যখন নিবিড় হয়ে ওঠে, তখন বসে বসে মনে করি আমার রাজার রূপটি বুঝি এইরকম—এমনি নেমে-আসা, এমনি ঢেকে-দেওয়া, এমনি চোপ-জুড়ানো, এমনি হৃদয়-ভরানো, চোখের পল্লবটি এমনি ছায়ামাথা, মূপের হাসিটি এমনি গভীরতার মধ্যে ডুবে থাকা । আবার শরৎকালে আকাশের পর্দা যখন দূরে উড়ে চলে যায় তপন মনে হয় তুমি মান করে তোমার শেফালিবনের পথ দিয়ে চলেছ, তোমার গলায় কুন্দফুলের মালা, তোমার বুকে শ্বেত-চন্দনের ছাপ, তোমার মাথায় হালকা সাদা কাপড়ের উষ্ণীয, তোমার চোখের দৃষ্টি দিগন্তের পারে—তখন মনে হয়, তুমি আমার পথিক বন্ধু ; তোমার সঙ্গে যদি চলতে পারি তাহলে দিগন্তে দিগন্তে সোনার সিংহদ্বার খুলে যাবে, শুভ্রতার ভিতরমহলে প্রবেশ করব। আর যদি না পারি তবে এই বাতায়নের ধারে বসে কোন এক অনেক-দূরের জন্তে দীর্ঘনিশ্বাস উঠতে থাকবে, কেবলই দিনের পর দিন, রাত্রির পর রাত্রি, অজ্ঞাত বনের পথশ্রেণী আর অনাস্ত্ৰাত ফুলের গন্ধের জন্যে বুকের ভিতরটা কেঁদে কেঁদে ঝুরে ঝুরে মরবে। আর বসন্তকালে এই যে সমস্ত বন রঙে রঙিন, এখন আমি তোমাকে দেখতে পাই কানে কুণ্ডল, হাতে অঙ্গদ, গায়ে বসষ্ট রঙের