পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఇ\లచ్చ রবীন্দ্র-রচনাবলী সুরঙ্গমা । সেই বীণা শুনব বলেই তো তোমার কাছে কাছে আছি । অভিমানগলানো মুর বাজবে জেনেই কান পেতে পড়ে ছিলুম। সুদৰ্শনা। তার পণটাই রইল—পথে বের করলে তবে ছাড়লে। মিলন হলে এই কথাটাই তাকে বলব যে, আমিই এসেছি, তোমার আসার অপেক্ষা করি নি। বলব চোখের জল ফেলতে ফেলতে এসেছি—কঠিন পথ ভাঙতে ভাঙতে এসেছি । এ-গর্ব আমি ছাড়ব না । সুরঙ্গম । কিন্তু সে-গর্বও তোমার টিকবে না । সে যে তোমারও আগে এসেছিল নইলে তোমাকে বের করে কার সাধ্য। সুদৰ্শন । তা হয়তো এসেছিল—আভাস পেয়েছিলুম কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি নি। যতক্ষণ অভিমান করে বসেছিলুম ততক্ষণ মনে হয়েছিল সেও আমাকে ছেড়ে গিয়েছে—অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে যখনই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লুম তখনই মনে হল সেও বেরিয়ে এসেছে, রাস্তা থেকেই তাকে পাওয়া শুরু করেছি। এখন আমার মনে আর কোনো ভাবনা নেই। তার জন্যে এত যে দুঃপ এই দুঃখই আমাকে তার সঙ্গে দিচ্ছে- এত কষ্টের রাস্ত আমার পায়ের তলায় যেন সুরে সুরে বেজে উঠছে—এ যেন আমার বীণা, আমার দুঃখের বীণা--এরই বেদনার গানে তিনি এই কঠিন পাথরে এই শুকনে ধুলোয় আপনি বেরিয়ে এসেছেন—আমার হাত ধরেছেন—সেই আমার অন্ধকার ঘরের মধ্যে যেমন করে হাত ধরতেন—হঠাং চমকে উঠে গায়ে কাটা দিয়ে উঠত—এও সেইরকম । কে বললে, তিনি নেই? সুরঙ্গমা তুই কি বুঝতে পারছিস নে তিনি লুকিয়ে এসেছেন ? স্বরঙ্গমার গান অন্ধকারের মাঝে আমায় ধরেছ দুই হাতে । কপন তুমি এলে, হে নাথ, মৃদু-চরণপাতে ? ভেবেছিলেম জীবনস্বামী, তোমায় বুঝি হারাই আমি, আমায় তুমি হারাবে না বুঝেছি আজ রাতে । যে নিশীথে আপন হাতে নিবিয়ে দিলেম আলো, তারই মাঝে তুমি তোমার ধ্রুবতারা জালো । তোমার পথে চলা যপন ঘুচে গেল, দেপি তপন আপনি তুমি আমার পথে লুকিয়ে চল সাথে ।