পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা ミbrs দ্বিজত্ব প্রমাণ করতে মাথা বাঁকা দিয়ে উঠেছিল অস্তরে বাহিরে সকল দিক থেকেই তাদের বিচলিত করা হল, হিন্দুত্বরক্ষার উপায়গুলিকে বিজ্ঞানের স্পর্শদোষ থেকে বাচাবার উদ্দেশ্যে ভাটপাড়ার সাহায্যে অসংখ্য প্যাম্ফলেট ছাপিয়ে আধুনিক বুদ্ধির কপালে “বিনামূল্যে ঋষিবাক্যবর্ষণ করতে কার্পণ্য করলেন না। অতি অল্পকালের মধ্যেই ক্রিয়াকর্মে, জপে তপে, আসনে আচমনে, ধ্যানে মানে, ধূপে ধুনোয়, গোব্রাহ্মণ সেবায়ু শুদ্ধাচারের আচল দুর্গ নিশ্চিন্দ্র করে বানালেন । অবশেষে গোদান, স্বর্ণদান, ভূমিদান, কন্যাদায় পিতৃদায় মাতৃদায় হরণ প্রভৃতির পরিবর্তে অসংখ্য ব্রাহ্মণের অজস্র আশীৰ্বাদ বহন করে তিনি লোকাস্তরে যখন গেলেন তপন তার সাতাশ বছর বয়স । এরই পিতার পরম বন্ধু, তারই সঙ্গে এক কলেজে-পড়া, একই হোটেলে চপকাটলেট-পাওয়া, রামলোচন বাড়ুজ্যের কন্যা যোগমায়ার সঙ্গে বরদার বিবাহ হয়েছিল। ঠিক সেই সময়ে যোগমায়ার পিতৃকুলের সঙ্গে পতিকুলের ব্যবহারগত বর্ণভেদ ছিল না । এর বাপের ঘরে মেয়েরা পড়াশুনো করেন, বাইরে বেরোন, এমন কি, তাদের কেউ-কেউ মাসিকপত্রে সচিত্র ভ্রমণবৃত্তাস্তও লিগেছেন । সেই বাড়ির মেয়ের শুচি সংস্করণে যাতে অমুম্বার-বিসর্গের ভুল-চুক না থাকে সেই চেষ্টায় লাগলেন তার স্বামী । সনাতন সীমা স্ত-রক্ষা নীতির আটল শাসনে যোগমায়ার গতিবিধি বিবিধ পাসপোর্ট প্রণালীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হল । চোপের উপরে তার ঘোমটা নামল, মনের উপরেও। দেবী সরস্বতী যপন কোনো অবকাশে এদের অন্তঃপুরে প্রবেশ করতেন তখন পাহারায় তাকেও কাপড়ঝাড়া দিয়ে আসতে হত। তার হাতের ইংরেজি বইগুলো বাইরেই হত বাজেয়াপ্ত,—প্রাগ বঙ্কিম বাংলা সাহিত্যের পরবর্তী রচনা ধরা পড়লে চৌকাঠ পার হতে পত মা ! যোগবাশিষ্ঠ রামায়ণের উংকৃষ্ট বাধাই বাংলা অতুবাদ যোগমায়ার শেলফে অনেক কাল থেকে অপেক্ষা করে আছে । অবসর-বিনোদন উপলক্ষ্যে সেটা তিনি আলোচনা করবেন এমন একটা আগ্রহ এ-বাড়ির কর্তৃপক্ষের মনে অস্তিমকাল পযন্তই ছিল । এই পৌরাণিক লোহার সিন্দুকের মধ্যে নিজেকে সেফ ডিপজিটের মতো ভাজ করে রাপা যোগমায়ার পক্ষে সহজ ছিল না, তবু বিদ্রোহী মনকে শাসনে রেখেছিলেন। এই মানসিক অবরোধের মধ্যে র্তার একমাত্র আশ্রয় ছিলেন দীনশরণ বেদাস্তরত্ন । এদের সভাপণ্ডিত । যোগমায়ার স্বাভাবিক স্বচ্ছ বুদ্ধি তাকে অত্যন্ত ভালো লেগেছিল। তিনি স্পষ্টই বলতেন, “মা, এ সমস্ত ক্রিয়াকর্মের জঞ্জাল তোমার জন্যে নয়। যারা মূঢ়, তারা কেবল যে নিজেদেরকে নিজেরাই ঠকায় তা নয়, পৃথিবী মুদ্ধ সমস্ত কিছুই তাদের ঠকাতে থাকে। তুমি কি মনে কর আমরা এ-সমস্ত বিশ্বাস করি ? দেখ নি কি, বিধান দেবার বেলায় আমরা প্রয়োজন বুঝে শাস্ত্রকে ব্যাকরণের প্যাচে উলটপালট করতে ۹ نه - - ه دا