পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯০ রবীন্দ্র-রচনাবলী দুঃখ বোধ করি না—তার মানে, মনের মধ্যে আমরা বাধন মানি নে, বাইরে আমাদের মূঢ় সাজতে হয় মূঢ়দের খাতিরে । তুমি নিজে যখন ভুলতে চাও না, তখন তোমাকে ভোলাবার কাজ আমার দ্বারা হবে না। যখন ইচ্ছা করবে, মা, আমাকে ডেকে পাঠিয়ে, আমি যা সত্য বলে জানি তাই তোমাকে শাস্ত্র থেকে শুনিয়ে যাব।” । এক-একদিন তিনি এসে যোগমায়াকে কখনো গীতা কখনো ব্ৰহ্মভাষা থেকে ব্যাপ্য করে বুঝিয়ে যেতেন। যোগমায়া তাকে এমন বুদ্ধিপূর্বক প্রশ্ন করতেন যে, বেদান্তরত্নমশায় পুলকিত হয়ে উঠতেন, এর কাছে আলোচনায় তার উৎসাহের অস্ত থাকত না । বরদাশংকর তার চারিদিকে ছোটোবড়ো যে-সব গুরু ও গুরুতরদের জুটিয়েছিলেন, তাদের প্রতি বেদান্তরত্নমশায়ের বিপুল অবজ্ঞা ছিল ; তিনি যোগমায়াকে বলতেন, “মা, সমস্ত শহরে একমাত্র এই তোমার ঘরে কথা কয়ে আমি সুখ পাই। তুমি আমাকে আত্মধিক্কার থেকে বাচিয়েছ।” এমনি করে কিছুকাল নিরবকাশ ব্ৰত-উপবাসের মধ্যে পঞ্জিকার শিকলি-বাধা দিনগুলো কোনোমতে কেটে গেল । জীবনটা আগাগোড়াই হয়ে উঠল আজকালকার খবরের কাগজি কিস্তৃত ভাষায় যাকে বলে “বাধ্যতামূলক ।” স্বামীর মৃত্যুর পরেই তার ছেলে যতিশংকর ও মেয়ে সুরমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন । শীতের সময় থাকেন কলকাতায়, গরমের সময়ে কোনো একটা পাহাড়ে। যতিশংকর এপন পড়ছে কলেজে ; কিন্তু সুরমাকে পড়বার মতো কোনো মেয়ে-বিদ্যালয় তার পছন্দ না হওয়াতে বহুসন্ধানে তার শিক্ষার জন্যে লাবণ্যলতাকে পেয়েছেন । তারই সঙ্গে আজ সকালে আচমকা অমিতর দেখা । 8 লাবণ্য-পুরাবৃত্ত লাবণ্যের বাপ অবনীশ দত্ত এক পশ্চিমি কলেজের অধ্যক্ষ । মাতৃহীন মেয়েকে এমন করে মানুষ করেছেন যে, বহু পরীক্ষা পাসের ঘষাঘষিতেও তার বিদ্যাবুদ্ধিতে লোকসান ঘটাতে পারে নি । এমন কি, এখনও তার পাঠান্তরাগ রয়েছে প্রবল । বাপের একমাত্র শখ ছিল বিদ্যায়, মেয়েটির মধ্যে তার সেই শখটির সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি হয়েছিল। নিজের লাইব্রেরির চেয়েও তাকে ভালোবাসতেন । উীর বিশ্বাস ছিল জ্ঞানের চর্চায় যার মনটা নিরেট হয়ে ওঠে, সেখানে উড়ো ভাবনার গ্যাস নিচে থেকে ঠেলে ওঠবার মতো সমস্ত ফাটল মরে যায়, সে-মানুষের পক্ষে বিয়ে করবার দরকার হয় না। তার দৃঢ় বিশ্বাস যে, তার মেয়ের মনে স্বামী-সেবা আবাদের যোগ্য যে নরম