পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

←Ꮝ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী হঠাৎ একসময় ভেজানে দরজা জোরে খুলে গেল। শোভনলালের বুকটা ধড়াস করে উঠল কেঁপে। লাবণ্য ঘরে ঢুকল। শোভন শশব্যস্ত হয়ে উঠে কী করবে ভেবে পেল না। লাবণ্য অগ্নিমূর্তি ধরে বললে, “আপনি কেন এ-বাড়িতে আসেন ?” শোভনলাল চমকে উঠল, মুখে কোনো উত্তর এল না । “আপনি জানেন, এখানে আসা নিয়ে আপনার বাবা কী বলেছেন ? আমার অপমান ঘটাতে আপনার সংকোচ নেই ?” শোভনলাল চোখ নিচু করে বললে, “আমাকে মাপ করবেন, আমি এখনই যাচ্ছি।” এমন উত্তর পর্যন্ত দিলে না যে, লাবণ্যর পিতা তাকে স্বয়ং আমন্ত্রণ করে এনেছেন। সে তার খাতাপত্র সমস্ত সংগ্রহ করে নিলে । হাত থর থর করে কঁপিছে ; বোবা একটা বাথা বুকের পাজরগুলোকে ঠেলা দিয়ে উঠতে চায়, রাস্তা পায় না। মাথা ষ্টেট করে বাড়ি থেকে সে চলে গেল। যাকে খুবই ভালোবাসা যেতে পারত, তাকে ভালোবাসবার অবসর যদি কোনো একটা বাধায় ঠেকে ফসকে যায়, তখন সেটা ন-ভালোবাসায় দাড়ায় না, সেটা দাড়ায় একটা অন্ধ বিদ্বেষে, ভালোবাসারই উলটো পিঠে । একদিন শোভনলালকে বরদান করবে বলেই বুঝি লাবণ্য নিজের অগোচরেই অপেক্ষা করে বসে ছিল । শোভনলাল তেমন করে ডাক দিলে না । তার পরে যা-কিছু হল সবই গেল তার বিরুদ্ধে । সকলের চেয়ে বেশি আঘাত দিলে এই শেষকালটায় । লাবণ্য মনের ক্ষোভে বাপের প্রতি নিতান্ত অন্যায় বিচার করলে । তার মনে হল, নিজে নিস্কৃতি পাবেন ইচ্ছে করেই শোভনলালকে তিনি আবার নিজে থেকে ডেকে এনেছেন, ওদের দুজনের মিলন ঘটাবার কামনায়। তাই এমন দারুণ ক্রোধ হল সেই নিরপরাধের উপরে । তার পর থেকে লাবণ্য ক্রমাগতই জেদ করে করে অবনীশের বিবাহ ঘটাল । অবনীশ র্তার সঞ্চিত টাকার প্রায় অর্ধাংশ তার মেয়ের জন্যে স্বতন্ত্র করে রেপেছিলেন । তার বিবাহের পরে লাবণ্য বলে বসল, সে তার পৈতৃক সম্পত্তি কিছুই নেবে না, স্বাধীন উপার্জন করে চালাবে । অবনীশ মর্মাহত হয়ে বললেন, “আমি তো বিয়ে করতে চাই নি, লাবণ্য, তুমিই তো জেদ করে বিয়ে দিইয়েছ। তবে কেন আজ আমাকে তুমি এমন করে ত্যাগ করছ?” লাবণ্য বললে, “আমাদের সম্বন্ধ কোনোকালে যাতে ক্ষুন্ন না হয়, সেইজন্যেই আমি এই সংকল্প করেছি। তুমি কিছু ভেবো না, বাবা । যে-পথে আমি যথার্থ স্বর্থী হব, সেই পথে তোমার আশীৰ্বাদ চিরদিন রেখো ।” কাজ তার জুটে গেল। স্বরমাকে পড়বার সম্পূর্ণ ভার তার উপরে। যতিকেও