পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা ←Ꮌ☾ অনায়াসে পড়াতে পারত, কিন্তু মেয়ে-শিক্ষয়িত্রীর কাছে পড়বার অপমান স্বীকার করতে যতি কিছুতেই রাজি হল না । প্রতিদিনের বাধা কাজে জীবন একরকম চলে যাচ্ছিল। উদ্বৃত্ত সময়টা ঠাসা ছিল ইংরেজি সাহিত্যে, প্রাচীন কাল থেকে আরম্ভ করে হালের বার্নার্ড শ’র আমল পর্যন্ত, এবং বিশেষভাবে গ্রীক ও রোমান যুগের ইতিহাসে, গ্রোট, গিবন ও গিলবার্ট মারের রচনায় । কোনো কোনো অবকাশে একটা চঞ্চল হাওয়া এসে মনের ভিতরটা যে একটু এলোমেলে করে যেত না তা বলতে পারি নে, কিন্তু হাওয়ার চেয়ে স্থূল ব্যাঘাত হঠাং ঢুকে পড়তে পারে ওর জীবনযাত্রার মধ্যে এমন প্রশস্ত ফাক ছিল না । এমন সময় ব্যাঘাত এসে পড়ল মোটরগাড়িতে চড়ে, পথের মাঝপানে, কোনো আওয়াজমাত্র ন! করে। হঠাং গ্রীস-রোমের বিরাট ইতিহাসটা হালকা হয়ে গেল —আর-সমস্ত-কিছুকে সরিয়ে দিয়ে অত্যন্ত নিকটের একটা নিবিড় বর্তমান ওকে নাড়া দিয়ে বললে, “জাগো” । লাবণ্য এক মুহূর্তে জেগে উঠে এতদিন পরে আপনাকে বাস্তবরূপে দেপতে পেলে, জ্ঞামের মধ্যে নয়, বেদনার মধ্যে । 6. আলাপের আরম্ভ অতীতের ভগ্নাবশেষ থেকে এবার ফিরে আসা যাক বর্তমানের নতুন সৃষ্টির ক্ষেত্রে । লাবণা পড়বার ঘরে অমিতকে বসিয়ে রেপে যোগমায়াকে খবর দিতে গেল । সে-ঘরে অমিত বসল যেন পদ্মের মাঝখানটাতে ভ্রমরের মতে । চারিদিকে চায়, সকল জিনিস থেকেই কিসের ছোওয়া লাগে,ওর মনটাকে দেয় উদাস করে । শেলফে, পড়বার টেবিলে ইংরেজি সাহিত্যের বই দেখলে ; সে-বইগুলো যেন বেঁচে উঠেছে। সব লাবণ্যর পড়া বই, তার আঙুলে পাতা-ওলটানো, তার দিনরাত্রির ভাবনা-লাগা, তার উংস্বক দৃষ্টির পথ-চলা, তার অন্যমনস্ক দিনে কোলের উপর পড়ে-থাকা বই। চমকে উঠল যখন টেবিলে দেখতে পেলে ইংরেজ কবি ডন-এর কাব্যসংগ্রহ। অক্সফোর্ডে থাকতে ডন এবং তার সময়কার কবিদের গীতিকাব্য ছিল অমিতর প্রধান আলোচ্য, এইখানে এই কাব্যের উপর দৈবাং দুজনের মন এক জায়গায় এসে পরস্পরকে স্পর্শ করল । এতদিনকার নিরুংসুক দিনরাত্রির দাগ লেগে অমিতর জীবনটা ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল,