পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

С) е е রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু আজকাল ওর ঘুমটা আর অবিমিশ্র নয়। সকাল-সকাল জাগবার একটা আগ্রহ তার অন্তর্নিহিত। প্রয়োজনের আগেই ঘুম ভাঙে—তার পরে পাশ ফিরে শুতে সাহস হয় না, পাছে বেলা হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ঘড়ির কাটা এগিয়ে দিয়েছে ; কিন্তু সময়-চুরির অপরাধ ধরা পড়বার ভয়ে সেটা বারবার করা সম্ভব হত না। আজ একবার ঘড়ির দিকে চাইলে, দেখলে বেলা এখনও সাতটার এপারেই। মনে হল ঘড়ি নিশ্চয় বন্ধ । কানের কাছে নিয়ে শুনলে টিকটিক শব্দ । এমন সময় চমকে উঠে দেখে, ডান হাতে ছাতা দোলাতে দোলাতে উপরের রাস্ত দিয়ে আসছে লাবণ্য। সাদা শাড়ি, পিঠে কালো রঙের তিনকোণ শাল, তাতে কালে ঝালর । অমিতর বুঝতে বাকি নেই যে, লাবণ্যর অর্ধেক দৃষ্টিতে সে গোচর হয়েছে, কিন্তু পূর্ণদৃষ্টিতে সেটাকে মোকাবিলায় কবুল করতে লাবণ্য নারাজ । বাকের মুগ পযন্ত লাবণ্য যেই গেছে, অমিত আর থাকতে পারলে না, দৌড়োতে দৌড়োতে তার পাশে উপস্থিত । বললে, “জানতেন এড়াতে পারবেন না, তবু দৌড় করিয়ে নিলেন । জানেন না কি, দূরে চলে গেলে কতটা অসুবিধা হয় ?” “কিসের অসুবিধা ?” অমিত বললে, “যে-হভভাগ৷ পিছনে পড়ে থাকে তার প্রাণটা উর্ধ্বস্বরে ডাকতে চায় । কিন্তু ডাকি কী বলে ? দেবদেবীদের নিয়ে সুবিধে এই যে, নাম ধরে ডাকলেই তারা খুশি । দুর্গ দুর্গা বলে গর্জন করতে থাকলেও ভগবতী দশভূজা অসন্তুষ্ট ইন না । আপনাদের নিয়ে যে মুশকিল।" “ন। ডাকলেই চুকে যায়।” “বিনা সম্বোধনেই চালাই যপন কাছে থাকেন । তাই তে বলি, দূরে যাবেন না । ডাকতে চাই অথচ ডাকতে পারি নে, এর চেয়ে দুঃখ আর নেই।" “কেন, বিলিতি কায়দা তো আপনার অভ্যাস আছে।” “মিস ডাট? সেটা চায়ের টেবিলে। দেখুন না, আজ এই আকাশের সঙ্গে পৃথিবী যখন সকালের আলোয় মিলল, সেই মিলনের লগ্নটি সার্থক করবার জন্যে উভয়ে মিলে একটি রূপ স্বষ্টি করলে, তারই মধ্যে রয়ে গেল স্বর্গমর্ত্যের ডাকনাম । মনে হচ্ছে না কি, একটা নাম ধরে ডাকা উপর থেকে নিচে আসছে, নিচে থেকে উপরে উঠে চলেছে ? মামুষের জীবনেও কি ওই রকমের নাম স্মৃষ্টি করবার সময় উপস্থিত হয় না ? কল্পনা করুন না, যেন এখনই প্রাণ খুলে গলা ছেড়ে আপনাকে ডাক দিয়েছি, নামের ডাক বনে বনে ধ্বনিত হল, আকাশের ওই রঙিন মেঘের কাছ পর্যন্ত পৌঁছোল, সামনের ওই