পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা S) e 2 পাহাড়টা তাই শুনে মাথায় মেঘ-মুড়ি দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবতে লাগল, মনে ভাবতেও কি পারেন সেই ডাকটা মিস ভাট ?” লাবণ্য কথাটাকে এড়িয়ে বললে, “নামকরণে সময় লাগে, আপাতত বেড়িয়ে *আসি গে।” । * অমিত তার সঙ্গ নিয়ে বললে, “চলতে শিখতেই মানুষের দেরি হয়, আমার হল উলটো, এতদিন পরে এখানে এসে তবে বসতে শিখেছি। ইংরেজিতে বলে, গড়ানে পাথরের কপালে খাওলা জোটে না-সেই ভেবেই অন্ধকার থাকতে কথন থেকে পথের ধারে বসে আছি। তাই তো ভোরের আলো দেখলুম।” লাবণ্য কথাটাকে তাড়াতাড়ি ঢাপ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “ওই সবুজ ডানাওআল। পাপিটার নাম জানেন ?” অমিত বললে, “জীবজগতে পাপি আছে সেটা এতদিন সাধারণভাবেই জানতুম, বিশেষভাবে জানবার সময় পাই নি । এখানে এসে, আশ্চর্য এই যে, স্পষ্ট জানতে পেরেছি, পাপি আছে, এমন কি, তারা গানও গায় ।” লাবণ্য হেসে উঠে বললে, “আশ্চর্য ।” অমিত বললে, “হাসছেন ! আমার গভীর কথাতেও গাম্ভীর্য রাপতে পারি নে। ওটা মুদ্রাদোষ। আমার জন্মলগ্নে আছে চাদ, ওই গ্রহটি কৃষ্ণচতুর্দশর সর্বনাশ রাত্রেও একটুপানি মুচকে না হেসে মরতেও জানে না।” লাবণ্য বললে, “আমাকে দোষ দেবেন না । বোধ হয় পাপিও যদি আপনার কথা শুনত, হেসে উঠত।” অমিত বললে, “দেখুন, আমার কথা লোকে হঠাং বুঝতে পারে না বলেই হাসে, বুঝতে পারলে চুপ করে বসে ভাবত। আজ পাধিকে নতুন করে জানছি এ-কথায় লোকে হাসছে। কিন্তু এর ভিতরের কথাটা হচ্ছে এই যে, আজ সমস্তই নতুন করে জানছি, নিজেকেও। এর উপরে তো হাসি চলে না। ওই দেখুন না, কথাট। একই, অথচ এইবার আপনি একেবারেই চুপ।” লাবণ্য হেসে বললে, “আপনি তো বেশিদিনের মানুষ না, খুবই নতুন, আরও নতুনের ঝোক আপনার মধ্যে আসে কোথা থেকে ?” "এর জবাবে খুব একটা গভীর কথাই বলতে হল ষা চায়ের টেবিলে বলা চলে না। আমার মধ্যে নতুন যেটা এসেছে সেটাই অনাদিকালের পুরোনে,--ভোরবেলাকার আলোর মতোই সে পুরোনে, নতুন-ফোটা ভুঁইচাপা ফুলেরই মতে, চিরকালের জিনিস, নতুন করে আবিষ্কার।"