পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১২ ' রবীন্দ্র-রচনাবলী জোড়া পড়ল, কলম ধরব কী দিয়ে। সব-চেয়ে ভালো মিল হাতে-হাতে মিল । এই যে তোমার আঙুলগুলি আমার আঙুলে আঙুলে কথা কইছে কোনো কবিই এমন সহজ করে কিছু লিখতে পারলে না।” “কিছুই তোমার সহজে পছন্দ হয় না, সেইজন্যে তোমাকে এত ভয় করি, মিতা " “কিন্তু আমার কথাটা বুঝে দেখে । রামচন্দ্র সীতার সত্য যাচাই কর৩ে চেয়েছিলেন বাইরের আগুনে ; তাতেই সীতাকে হারালেন । কবিতার সত্য যাচাই হয় অগ্নিপরীক্ষায়, সে আগুন অস্তরের । যার মনে নেই সেই আগুন, সে যাচাই করবে কী দিয়ে ? তাকে পাচজনের মুখের কথা মেমে নিতে হয়, অনেক সময়ই সেটা দুমুখের কথা । আমার মনে আজ আগুন জলেছে, সেই আগুনের ভিতর দিয়ে আমার পুরোনো সব পড়া আবার পড়ে নিচ্ছি, কত অল্পই টি কল । সব হু হু শব্দে ছাই হয়ে যাচ্ছে । কবিদের হট্টগোলের মাঝপানে দাড়িয়ে আজ আমাকে বলতে হল, তোমরা অত চেচিয়ে কথা ক’য়ে না, ঠিক কথাটি আস্তে বলো— For God's sake, hold your tongue and let me love * অনেকক্ষণ দু-জনে চুপ করে বসে রইল। তার পরে এক সময়ে লাবণ্যর হাতখানি তুলে ধরে অমিত নিজের মুথের উপর বুলিয়ে নিলে । বললে, ”ভেবে দেগো বন্যা, আজ এই সকালে ঠিক এই মূহুর্তে সমস্ত পৃথিবীতে কত অসংখ্য লোকই চাচ্ছে, আর কত অল্প লোকই পেলে । আমি সেই অতি অল্প লোকের মধ্যে একজন । সমস্ত পৃথিবীতে একমাত্র তুমিই সেই সৌভাগ্যবান লোককে দেখতে পেলে শিলঙ পাহাড়ের কোণে এই যুক্যালিপটস গাছের তলায়। পৃথিবীতে পরমাশ্চর্য ব্যাপারগুলিই পরম নম্র, চোপে পড়তে চায় না । অথচ তোমাদের ওই তারিণা তলাপাত্র কলকাতার গোলদিঘি থেকে আরম্ভ করে নোয়াপালি চাটগ পর্যন্থ চাংকার-শকে শূন্তের দিকে ঘূৰি উচিয়ে বাকী পলিটিক্সের ফাক আওয়াজ ছড়িয়ে এল, সেই দুর্দাস্ত বাজে পবরটা বাংলা দেশের সর্বপ্রধান খবর হয়ে উঠল । কে জানে হয়তো এইটেই ভালো ।” “কোনটা ভালো ?” Tr “ভালে৷ এই যে, সংসারের আসল জিনিসগুলো হাটেলাটেই চলাফের করে বেড়ায়, অথচ বাজে লোকের চোখের ঠোকর পেয়ে পেয়ে মরে না । তার গভীর জানাজানি বিশ্বজগতের অস্তরের নাড়ীতে নাড়াতে –আচ্ছা, বন্যা, আমি তো বকেই চলেছি, তুমি চুপ করে বসে কী ভাবছ বলে তো।” লাবণ্য চোখ নিচু করে বসে রইল, জবাব করলে না। " 幢