পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిచ్చి8 রবীন্দ্র-রচনাবলী চুপ করে পড়ে থেকে অবশেষে টেবিল থেকে বইটা টেনে নিলে। কিছু সময় গেল মন দিতে, তার পরে গল্পের ধারার মধে। প্রবেশ করে কখন নিজেকে ভুলে গেল তা জানতে পারে নি । এমন সময় যোগমায়া ডাকলেন বেড়াতে যেতে, ওর উৎসাহ হল না । যোগমায়া একটা চৌকি টেনে লাবণ্যর সামনে বসলেন, দীপ্ত চোপ তার মুখে রেখে বললেন, “সত্যি করে বলে দেখি লাবণ্য, তুমি কি অমিতকে ভালোবাস ?” লাবণ্য তাড়াতাড়ি উঠে বসে বললে, “এমন কথা কেন জিজ্ঞাসা করছ, কর্তমা ?” ‘. “যদি না ভালোবাস ওকে স্পষ্ট করেই বল না কেন ? নিষ্ঠর তুমি, ওকে যদি না চাও তবে ওকে ধরে রেপো না ।" লাবণ্যর বুকের ভিতরট ফুলে ফুলে উঠল, মুপ দিয়ে কথা বেরোল না । "এইমাত্র যে-দশা ওর দেখে এলুম বুক ফেটে যায় । এমন ভিক্ষকের মতে কার জন্যে এখানে ও পড়ে আছে ? ওর মতো ছেলে যাকে চায় সে যে কতবড়ো ভাগাব তাঁ তা কি একটুও বুঝতে পার না ?” চেষ্টা করে রুদ্ধ কণ্ঠের বাধা কাটিয়ে লাবণ্য বলে উঠল, “আমার ভালোবাসার কথা জিজ্ঞাসা করছ, কর্তমা ? আমি তো ভেবে পাই নে আমার চেয়ে ভালোবাসতে পারে পৃথিবীতে এমন কেউ আছে । ভালোবাসায় আমি যে মরতে পারি। এতদিন যা ছিলুম সব যে আমার লুপ্ত হয়ে গেছে r এখন থেকে আমার আর-এক আরম্ভ, এ আরম্ভের শেষ নেই। আমার মধ্যে এ যে কত আশ্চর্য সে আমি কাউকে কেমন করে জানাব ? আর কেউ কি এমন করে জেনেছে ?” যোগমায়া অবাক হয়ে গেলেন। চিরদিন দেপে এসেছেন লাবণ্যর মধ্যে গভীর শাস্তি, এতবড়ো দুঃসহ আবেগ কোথায় এতদিন লুকিয়ে ছিল ? তাকে আস্তে আস্তে বললেন, “মা লাবণ্য, নিজেকে চাপা দিয়ে রেপো না । অমিত অন্ধকারে তোমাকে খুজে খুজে বেড়াচ্ছে,—সম্পূর্ণ করে তার কাছে তুমি আপনাকে জানাও,— একটুও ভয় ক’রো না । যে-আলো তোমার মধ্যে জলেছে সে-আলো যদি তার কাছেও প্রকাশ পেত তাহলে তার কোনো অভাব থাকত না । চলো, মা, এখনই চলে আমার সঙ্গে ।” 蟲 দুজনে গেলেন অমিতর বাসায় । (f