পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VLLඟ njri * রবীন্দ্র-রচনাবলী “এমন কড়া শাসন কেন ?” “সেদিন যে সহজ আনন্দের কথা বলেছিলে তাকে সহজ রাখবার জন্তে ।” “এটা একেবারে গভীর জ্ঞানের কথা। সেদিন তোমাকে কবি বলে সন্দেহ, করেছিলুম, আজ সন্দেহ করছি ফিলজফার বলে। চমৎকার বলেছ। সহজকে সহজ রাখতে হলে শক্ত হতে হয় । ছন্দকে সহজ করতে চাও তো যতিকে ঠিক জায়গায় কষে আঁটতে হবে। লোভ বেশি, তাই জীবনের কাব্যে কোথাও যতি দিতে মন সরে না, ছন্দ ভেঙে গিয়ে জীবনটা হয় গীতহীন বন্ধন। আচ্ছা, কালই চলে যাব, একেবারে হঠাৎ এই ভরা-দিনগুলোর মাঝখানে। মনে হবে যেন মেঘনাদবধ কাব্যের সেই চমকে থেমে-যাওয়া লাইনটা— চলি যবে গেলা যমপুরে অকালে ! শিলঙ থেকে আমিই না হয় চলুম কিন্তু পাজি থেকে অজ্ঞান মাস তো ফস করে পালাবে না। কলকাতায় গিয়ে কী করব জান ?” “কী করবে ?” “মাসিমা যতক্ষণ করবেন বিয়ের দিনের ব্যবস্থা, ততক্ষণ আমাকে করতে হবে তার পরের দিনগুলোর আয়োজন । লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আট, প্রতিদিন ওকে নূতন করে স্বষ্টি করা চাই । মনে আছে, বন্যা, রঘুবংশে অজ মহারাজা ইন্দুমতীর কী বর্ণনা করেছিলেন ?” লাবণ্য বললে, “প্রিয়শিষ্য ললিতে কলাবিধোঁ ।” অমিত বললে, “সেই ললিত কলাবিধিটা দাম্পত্যেরই। অধিকাংশ বর্বর বিয়েটাকেই মনে করে মিলন, সেইজন্তে তার পর থেকে মিলনটাকে এত অবহেলা ।” “মিলনের আর্ট তোমার মনে কী রকম আছে বুঝিয়ে দাও। যদি আমাকে শিক্ষা করতে চাও আজই তার প্রথম পাঠ শুরু হ’ক ।” “আচ্ছা, তবে শোনো । ইচ্ছাকৃত বাধা দিয়েই কবি ছন্দের সৃষ্টি করে । মিলনকেও সুন্দর করতে হয় ইচ্ছাকৃত বাধায় । চাইলেই পাওয়া যায় দামি জিনিসকে এত সস্ত করা নিজেকেই ঠকানো । কেননা শক্ত করে দাম দেওয়ার আনন্দটা বড়ো কম নয়।” “দামের হিসাবটা শুনি ।” o

  • রসো, তার আগে আমার মনে যে-ছবিটা আছে বলি। গঙ্গার ধার, বাগানট ডায়মণ্ড হারবারের ওই দিকটাতে । ছোটো একটি স্টীম লঞ্চ করে ধন্টা-ইয়েকের মধ্যে কলকাতায় যাতায়াত করা যায় ।”