পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

·ථ88 রবীন্দ্র-রচনাবলী এমন সময়, বেলা তখন নটী, অমিত দুমদাম শবে ঘরে ঢুকেই মাসিমা মাসিম করে ডাক দিলে। যোগমায়া প্রাতঃসন্ধ্যা সেরে ভাড়ারের কাজে প্রবৃত্ত। আজ তারও মনটা পীড়িত। অমিত তার কথায় হাসিতে চাঞ্চল্যে এতদিন তার স্নেহাসক্ত মনকে তার ঘরকে ভরে রেখেছিল। সে চলে গেছে এই ব্যথার বোঝা নিয়ে তার সকালবেলাটা যেন বৃষ্টিবিন্দুর ভারে সদ্যঃপাতী ফুলের মতো হয়ে পড়ছে। র্তার বিচ্ছেদকাতর ঘরকল্লার কাজে আজ তিনি লাবণ্যকে ডাকেন নি, বুঝেছিলেন আজ তার দরকার ছিল একলা থাকার, লোকের চোখের আড়ালে । লাবণ্য তাড়াতাড়ি উঠে দাড়াল, কোলের থেকে বই গেল পড়ে, জানতেও পারলে না । এদিকে যোগমায়া ভাড়ারঘর থেকে দ্রুতপদে বেরিয়ে এসে বললেন, “কী বাবা অমিত, ভূমিকম্প নাকি ?” “ভূমিকম্পই তো । জিনিসপত্র রওনা করে দিয়েছি ; গাড়ি ঠিক ; ডাকঘরে গেলুম দেখতে চিঠিপত্র কিছু আছে কিনা । সেখানে এক টেলিগ্রাম।” অমিতর মুখের ভাব দেখে যোগমায়া উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “পবর সব ভালো তো ?” 副 লাবণ্যও ঘরে এসে জুটল। অমিত ব্যাকুল মুখে বললে, “আজই সন্ধ্যেবেলায় আসছে সিসি, আমার বোন, তার বন্ধু কেটি মিত্তির, আর তার দাদা নরেন ।” “ত ভাবনা কিসের, বাছ ? শুনেছি ঘোড়দৌড়ের মাঠের কাছে একটা বাড়ি পালি আছে । যদি নিতান্ত না পাওয়া যায় আমার এখানে কি একরকম করে জায়গা হবে না ?” “সেজন্তে ভাবনা নেই, মাসি । তার নিজেরাই টেলিগ্রাফ করে হোটেলে জায়গা ঠিক করেছে।” “আর যাই হ’ক বাবা, তোমার বোনের এসে যে দেপবে তুমি ওই লক্ষ্মীছাড়া বাড়িটাতে আছ সে কিছুতেই হবে না । তারা আপন লোকের ধ্যাপামির জন্তে দায়িক করবে আমাদেরই ।” “না মাসি, আমার প্যারাডাইস লস্ট । ওই নগ্ন আসবাবের স্বর্গ থেকে আমার বিদায়। সেই দড়ির থাটিয়ার নীড় থেকে আমার মুখস্বপ্নগুলে। উড়ে পালাবে। আমাকেও জায়গা নিতে হবে সেই অতিপরিচ্ছন্ন হোটেলের এক অতিসভ্য কামরায় ।” কথাটা বিশেষ কিছু নয়, তবু লাবণ্যর মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। এতদিন একটা কথা ওর মনেও আসে নি যে, অমিতর যে-সমাজ সে ওদের সমাজ থেকে সহস্ৰ যোজন দূরে । এক মুহূর্তেই সেটা বুঝতে পারলে । অমিত যে আজ কলকাতায় চলে যাচ্ছিল তার