পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)8V রবীন্দ্র-রচনাবলী করে তুমি ভাব কেন ? না হয় আর সবাই জানতে পারলে। ঠিকমতে জানতে পারাই তো চাই, তা হলে কেউ অমর্যাদা করতে সাহস করে না।” এ-কথার কোনো উত্তর না দিয়ে অমিত বললে, “বন্ত, ঠিক করে রেখেছি, বিয়ের পরে ওই বাড়িতেই আমরা কিছুদিন এসে থাকব। আমার সেই গঙ্গার ধারের বাগান, সেই ঘাট, সেই বটগাছ সব মিলিয়ে গেছে ওই বাড়িটার মধ্যে । তোমার দেওয়া মিতালি নাম ওকেই সাজে ।” “ও-বাড়ি থেকে আজ তুমি বেরিয়ে এসেছ, মিতা। আবার একদিন যদি ঢুকতে চাও দেখবে ওখানে তোমাকে কুলোবে না। পৃথিবীতে আজকের দিনের বাসায় কালকের দিনের জায়গা হয় না। সেদিন তুমি বলেছিলে, জীবনে মানুষের প্রথম সাধনা দারিদ্র্যের, দ্বিতীয় সাধনা ঐশ্বর্ষের। তার পরে শেষ সাধনার কথা বল নি, সেটা হচ্ছে ত্যাগের ।” “বদ্যা, ওটা তোমাদের রবি ঠাকুরের কথা । সে লিখেছে, শাজাহান আজ তার তাজমহলকেও ছাড়িয়ে গেল। একটা কথা তোমার কবির মাথায় আসে নি যে, আমরা তৈরি করি, তৈরি জিনিসকে ছাড়িয়ে যাবার জন্যেই। বিশ্বসৃষ্টিতে ওইটেকেই বলে এভোলুশন। একটা অনাস্থষ্টি ভূত ঘাড়ে চেপে থাকে, বলে, স্মৃষ্টি করে, স্বষ্টি করলেই ভূত নামে, তপন স্বাক্টটাকেও আর দরকার থাকে না । কিন্তু তাই বলে ওই ছেড়ে-যাওয়াটাই চরম কথা নয়। জগতে শাজাহান-মমতাজের অক্ষয় ধারা বয়ে চলেছেই, ওরা কি একজন মাত্র ? সেইজন্তেই তো তাজমহল কোনোদিন শূন্ত হতেই পারল না। নিবারণ চক্রবর্তী বাসরঘরের উপর একটা কবিতা লিখেছে,– সেটা তোমাদের কবিবরের তাজমহলের সংক্ষিপ্ত উত্তর, পোস্টকার্ডে লেপা— তোমারে ছাড়িয়া যেতে হবে রাত্রি যবে উঠিবে উন্মনা হয়ে প্রভাতের রথচক্ররবে । হায় রে বাসরঘর, বিরাট বাহির সে যে বিচ্ছেদের দম্য ভয়ংকর। তবু সে যতই ভাঙে-চোরে, মালাবদলের হার যত দেয় ছিন্ন ছিন্ন করে, তুমি আছ ক্ষয়হী অম্বুদিন ; তোমার উংসব বিচ্ছিন্ন না হয় কণ্ডু, না হয় নীরব ।