পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NᏬ8b~ রবীন্দ্র-রচনাবলী নিচের পাতাটা ভিজে গেছে। একবার ভাবলে ফিরিয়ে দিয়ে আসি গে, কিন্তু ফিরিয়ে । দিলে না, সেটা নিল পকেটে । হোটেলে যাব-ষাব করলে, তাও গেল না ; বসে পড়ল গাছতলাটাতে। রাত্রের ভিজে মেঘে আকাশটাকে খুব করে মেজে দিয়েছে। লো: ধোওয়া বাতাসে অত্যন্ত স্পষ্ট করে প্রকাশ পাচ্ছে চারদিকের ছবিটা ; পাহাড়ের আর গাছপালার সীমান্তগুলি যেন ঘন নীল আকাশে খুদে-দেওয়া, জগংটা যেন কাছে এগিয়ে একেবারে মনের উপরে এসে ঠেকল। আস্তে আস্তে বেলা চলে যাচ্ছে, তার ভিতরটাতে ' ভৈরবীর সুর। এখনই খুব কষে কাজে লাগবে বলে লাবণ্যর পণ ছিল, তবু যখন দূর থেকে দেখলে অমিত গাছতলায় বসে, আর থাকতে পারলে না, বুকের ভিতরটা স্থাপিয়ে উঠল, চোপ এল জলে ছলছলিয়ে। কাছে এসে বললে, “মিত, তুমি কী ভাবছ ?” “এতদিন যা ভাবছিলুম একেবারে তার উলটাে ।” “মাঝে মাঝে মনটাকে উলটিয়ে না দেখলে তুমি ভালো থাক না। তা তোমার উলটো ভাবনাটা কী রকম শুনি ।” “তোমাকে মনের মধ্যে নিয়ে এতদিন কেবল ঘর বানাচ্ছিলুম,---কপনো গঙ্গার ধারে, কপনো পাহাড়ের উপরে । আজ মনের মধ্যে জাগছে সকালবেলাকার আলোয় উদাস-করা একটা পথের ছবি,—অরণ্যের ছায়ায় ছায়ায় ওই পাহাড়গুলোর উপর দিয়ে । হাতে আছে লোহার ফলাওআলা লম্বা লাঠি, পিঠে আছে চামড়ার স্ট্র্যাপ দিয়ে বাধা একটা চৌকো থলি । তুমি চলবে সঙ্গে । তোমার নাম সার্থক হ’ক, বস্তা, তুমি আমাকে বদ্ধঘর থেকে বের করে পথে ভাসিয়ে নিয়ে চললে বুঝি । ঘরের মধ্যে নানান লোক, পথ কেবল দুজনের ” so “ডায়মণ্ড হারবারের বাগানটা তো গেছেই, তার পরে সেই পচাত্তর টাকার ঘরবেচারাও গেল। তা যাক গে। কিন্তু চলবার পথে বিচ্ছেদের ব্যবস্থাটা কী রকম করবে ? দিনান্তে তুমি এক পান্থশালায় ঢুকবে, আর আমি আর-একটাতে ?” "তার দরকার হয় না, বন্য। চলাতেই নতুন রাপে, পায়ে পারে নতুন, পুরোনো হবার সময় পাওয়া যায় না। বসে-থাকাটাই বুড়োমি ।” “হঠাং এ খেয়ালটা তোমার কেন মনে হল, মিতা ?” “তবে বলি। হঠাৎ শোভনলালের কাছ থেকে একপান চিঠি পেয়েছি। তার নাম গুনেছ বোধ হয়, রায়চাদ-প্রেমচাঁদওআলা। ভারত-ইতিহাসের সাবেক পথগুলো সন্ধান করবে বলে কিছুকাল থেকে সে বেরিয়ে পড়েছে। সে অতীতের লুপ্ত পথ উদ্ধার করতে চায়, আমার ইচ্ছে ভবিষ্যতের পথ স্থষ্টি করা ।”