শেষের কবিতা "ඵ8O লাবণ্যর বুকের ভিতরে হঠাং খুব একটা ধাক্কা দিলে। কথাটাকে বাধা দিয়ে অমিতকে বললে, “শোভনলালের সঙ্গে একই বৎসর আমি এম. এ. দিয়েছি। তার সব পবরটা শুনতে ইচ্ছে করে।” “এক সময়ে সে থেপেছিল আফগানিস্থানের প্রাচীন শহর কাপিশের ভিতর দিয়ে একদিন যে পুরোনো রাস্ত চলেছিল, সেইটেকে আয়ত্ত করবে। ওই রাস্তা দিয়েই ভারতবর্ষে হিউয়েন সাঙের তীর্থযাত্রা, ওই রাস্ত দিয়েই তারও পূর্বে আলেকজাণ্ডারের রণযাত্রা । খুব কষে পুশতু পড়লে, পাঠানি কায়দাকান্তন অভ্যেস করলে। সুন্দর চেহারা, টিলে কাপড়ে ঠিক পাঠানের মতো দেখতে হয় না, দেখায় যেন পারসিকের মতো । আমাকে এসে ধরলে সেখানে ফরাসি পণ্ডিতরা এই কাজে লেগেছেন তাদের কাছে পরিচয়-পত্র দিতে, ফ্রান্সে থাকতে র্তাদের কারও কারও কাছে আমি পড়েছি । দিলেম পত্র, কিন্তু ভারত-সরকারের ছাড়চিঠি জুটল না । তার পর থেকে দুর্গম হিমালয়ের মধ্যে কেবলই পথ খুজে খুজে বেড়াচ্ছে, কপনে কাশ্মীরে কপনে কুমায়ুনে । এবার ইচ্ছে হয়েছে হিমালয়ের পূর্ব-প্রাস্তটাতেও সন্ধান করবে। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের রাস্ত এদিক দিয়ে কোপায় কোথায় গেছে সেইটে দেখতে চায় । ওই পথ-ধ্যাপাটার কথা মনে করে আমারও মন উদাস হয়ে যায় । পুথির মধ্যে আমরা কেবল কথার রাস্তা খুঁজে খুজে চোখ থোওয়াই, ওই পাগল বেরিয়েছে পথের পুথি পড়তে, মানব-বিধাতার নিজের হাতে লেখা । আমার কী মনে হয় জান ?” “কী, বলে ।” “প্রথম যৌবনে একদিন শোভনলাল কোন স্ট্রাকনপর হাতের ধাক্কা খেয়েছিল, তাই ঘরের থেকে পথের মধ্যে ছিটকিয়ে পড়েছে। ওর সমস্ত কাহিনীটা স্পষ্ট জানি নে, কিন্তু একদিন ওতে-আমাতে একলা ছিলুম, নানা কথায় হল প্রায় রাত দুপুর, জানলার বাইরে হঠাং চাদ দেখা দিল, একটা ফুলন্ত জারুলগাছের আড়ালে, ঠিক সেই সময়টাতে কোনো-একজনের কথা বলতে গেল, নাম করলে না, বিবরণ কিছুই বললে না, অল্প একটু আভাস দিতেই গলা ভার হয়ে এল, তাড়াতাড়ি বেরিয়ে চলে গেল। বুঝতে পারলুম ওর জীবনের মধ্যে কোনখানে অত্যন্ত একটা নিষ্ঠুর কথা বিধে আছে। সেই কথাটাকেই বুঝি পথ চলতে চলতে ও পায়ে-পায়ে খইয়ে দিতে চায়।” লাবণ্যর হঠাৎ উদ্ভিদতত্ত্বের কোক এল, কুয়ে পড়ে দেখতে লাগল, ঘাসের মধ্যে সাদায়-হলদেয় মেলানো একটা বুনো ফুল। একান্ত মনোযোগে তার পাপড়িগুলো গুনে দেখার জরুরি দরকার পড়ল । অমিত বললে, “জান বস্তা, আমাকে তুমি আজ পথের দিকে ঠেলে দিয়েছ ।”