পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা s ·ථA L এইটেই তার ধূমকেতু মুখো নামের প্রধান কারণ। অমিত তাকে দূর থেকেই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে এবং নিজেকে ভুলিয়েছে যে, ধূমকেতু বুঝি সেটা বুঝতে পারে নি। কিন্তু দেখেও দেখতে না পাওয়াটা একটা বড়ে বিষ্ঠের অন্তর্গত। চুরিবিন্ধের মতোই, “তার সার্থকতার প্রমাণ হয় যদি না পড়ে ধরা। তাতে প্রত্যক্ষ দৃপ্তটাকে সম্পূর্ণ পার করে দেপবার পারদর্শিত চাই । কুমার মুখো শিলঙের বাঙালিসমাজ থেকে এমন অনেক কথা সংগ্রহ করেছে যাকে মোট অক্ষরে শিরোনাম দেওয়া যেতে পারে “অমিত রায়ের অমিতাচার।” মূপে সব-চেয়ে নিন্দে করেছে যারা, মনে সব-চেয়ে রসভোগ করেছে তারাই । যকৃতের বিকৃতিশোধনের জন্তে কুমার কিছুদিন এখানে থাকবে বলেই স্থির ছিল, কিন্তু জনশ্রুতি বিস্তারের উগ্র উৎসাহে তাকে পাচদিনের মধ্যে কলকাতায় ফেরালে । সেখানে গিয়ে অমিত সম্বন্ধে তার চুরুটধুমাকৃত অত্যুক্তি উদগারে সিসি-লিসিমহলে কৌতুকে কৌতুহলে জড়িত বিভীষিকা উৎপাদন করলে । অভিজ্ঞ পাঠকমাত্রই এতক্ষণে অনুমান করে থাকবেন যে, সিসি-দেবতার বাহন হচ্ছে কেটি মিত্তিরের দাদা নরেন । তার অনেক দিনের একনিষ্ঠ বাহন-দশা এবার বৈবাহনের দশম দশায় উত্তীর্ণ হবে এমন কথা উঠেছে। সিসি মনে-মনে রাজি । কিন্তু যেন রাজি নয় ভাব দেখিয়ে একটা প্রদোষান্ধকার ঘনিয়ে রেখেছে। অমিতর সম্মতিসহায়ে নরেন এই সংশয়টুকু পার হতে পারবে বলে ঠিক করেছিল, কিন্তু অমিত হাম্বাগটা ম। ফেরে কলকাতায়, না দেয় চিঠির জবাব । ইংরেজি যতগুলো গৰ্হিত শব্দভেদী বাক্য তার জানা ছিল সবগুলিই প্রকাস্তে ও স্বগত উক্তিতে নিরুদ্দেশ অমিতর প্রতি নিক্ষেপ করেছে। এমন কি, তারযোগে অত্যন্ত বেতার বাক্য শিলঙে পাঠাতে ছাড়ে নি,–কিন্তু উদাসীন নক্ষত্রকে লক্ষ্য করে উদ্ধত হাউয়ের মতো কোথাও তার দহরেখা রইল না। অবশেষে সর্বসম্মতিক্রমে স্থির হল অবস্থাটার সরেজমিন তদন্ত হওয়া দরকার। সর্বনাশের স্রোতে অমিতর কুটির ডগাটাও যদি কোথাও একটু দেখা যায় টেনে ডাঙায় তোলা আগু দরকার। এ-সম্বন্ধে তার আপন বোন সিসির চেয়ে পরের বোন কেটির উৎসাহ অনেক বেশি। ভারতের ধন বিদেশে লুপ্ত হচ্ছে বলে আমাদের পলিটিক্সের ষে আক্ষেপ কেটি মিটারের ভাবখানা সেই জাতের। নরেন মিটার দীর্ঘকাল যুরোপে ছিল। জমিদারের ছেলে, আয়ের জন্ত ভাবনা নেই, ব্যয়ের জন্তেও বিস্তার্জনের ভাবনাও সেই পরিমাণে লঘু। বিদেশে ব্যয়ের প্রতিই অধিক মনোযোগ করেছিল, অর্থ এবং সময় দুই দিক থেকেই। নিজেকে আর্টিস্ট বলে পরিচয় দিতে পারলে একই কালে দায়মুক্ত স্বাধীনতা ও অহৈতুক আত্মসন্মান লাভ করা