পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|రి(tఛ్చ রবীন্দ্র-রচনাবলী যায়। এই জন্তে আর্ট-সরস্বতীর অনুসরণে যুরোপের অনেক বড়ে বড়ো শহরের বোহিমীয় পাড়ায় সে বাস করেছে। কিছুদিন চেষ্টার পর স্পষ্টবক্তা হিতৈষীদের কঠোর অনুরোধে ছবি আঁকা ছেড়ে দিতে হল, এখন সে ছবির সমজদারিতে পরিপক্ক বলেই নিজের প্রমাণনিরপেক্ষ পরিচয় দেয়। চিত্রকলা সে ফলাতে পারে না কিন্তু দুই হাতে" সেটাকে চটকাতে পারে। ফরাসি ছাচে সে তার গোফের দুই প্রত্যন্তদেশকে সযত্বে কণ্টকিত করেছে, এদিকে মাথায় বাঁকড়া চুলের প্রতি তার সষত্ব অবহেলা । চেহারাধান তার ভালোই, কিন্তু আরও ভালো করবার মহার্ঘ্য সাধনায় তার আয়নার টেবিল প্যারিসীয় বিলাসবৈচিত্র্যে ভারাক্রান্ত । তার মুখ-ধোবার টেবিলের উপকরণ দশাননের পক্ষেও বাহুল্য হত । দামি হাভানা দু-চার টান টেনেই অনায়াসেই সেটাকে অবজ্ঞা করা, এবং মাসে মাসে গাত্রবস্ত্র পার্সেল পোস্টে ফরাসি ধোবার বাড়িতে ধুইয়ে আনানো-- এ-সব দেখে ওর আভিজাত্য সম্বন্ধে দ্বিরুক্তি করতে সাহস হয় না । যুরোপের শ্রেষ্ঠ দরজিশালার রেজেস্ট্রি বহিতে ওর গায়ের মাপ ও নম্বর লেখা, এমন সব কোঠায়, যেখানে খুঁজলে পাতিয়ালা-কপূরতলার নাম পাওয়া যেতে পারে। ওর স্ন্যাঙ-বিকীর্ণ ইংরেজি ভাষার উচ্চারণটা বিজড়িত বিলম্বিত, আমীলিত চক্ষুর অলস কটাক্ষ সহযোগে অনতিব্যক্ত ; যারা অভিজ্ঞ তাদের কাছে শোনা যায় ইংলণ্ডের অনেক নীলরক্তবান আমীরদের কণ্ঠস্বরে এই রকম গদগদ জড়িমা । এর উপরে ঘোড়দৌড়ীয় অপভাষা এবং বিলিতি শপথের দুর্বাক্যসম্পদে সে তার দলের লোকের আদর্শ পুরুষ । কেটি মিটারের আসল নাম কেতকী। চালচলন ওর দাদারই কায়দাকারখানার বকযন্ত্রপরম্পরায় শোধিত তৃতীয় ক্রমের চোলাই-কর,—বিলিতি কৌলীষ্ঠের ঝাঝালো এসেন্স। সাধারণ বাঙালি মেয়ের দীর্ঘকেশগৌরবের গর্বের প্রতি গৰ্বসহকারেই কেটি দিয়েছে কাচি চালিয়ে, গোপাট ব্যাঙাচির লেজের মতো বিলুপ্ত হয়ে অন্তকরণের উল্লম্ফশীল পরিণত অবস্থা প্রতিপন্ন করছে। মুখের স্বাভাবিক গৌরিমা বর্ণপ্রলেপের দ্বারা এনামেল-করা । জীবনের আদ্যলীলায় কেটির কালো চোখের ভাবটি ছিল স্নিগ্ধ, এখন মনে হয় সে যেন যাকে-তাকে দেখতেই পায় না। যদি বা দেখে তো লক্ষ্যই করে না, যদি বা লক্ষ্য করে তাতে যেন আধখোলা একটা ছুরির ঝলক থাকে। প্রথমবয়সে ঠোটদুটিতে সরল মাধুর্য ছিল, এখন বার-বার বেঁকে বেঁকে তার মধ্যে বাকী অঙ্কুশের মতো ভাব স্থায়ী হয়ে গেছে । মেয়েদের বেশের বর্ণনায় আমি আনাড়ি । তার পরিভাষা জানি নে। মোটের উপর চোখে পড়ে, উপরে একটা পাতলা সাপের খোলসের মতো ফুরফুরে আবরণ, অন্দরের কাপড় থেকে অন্য একটা রঙের আভাস আসছে। বুকের অনেকখানিই অনাবৃত ; আর অনাবৃত বাহুদুটিকে কখনো কখনো টেবিলে, কখনো