পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○やう● রবীন্দ্র-রচনাবলী 领 মধ্যে হঠাং আজ বুঝি কেমন করে বিশেষ দিনের স্পর্শ লেগেছে, সাধারণ দিনের বেড়া গেছে ভেঙে ! o নিকটে এসে দেখে যোগমায়া তার ঘরের বাইরে স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে, আর সিসি তার মুখের সিগারেট কেটির মুখের সিগারেট থেকে আলিয়ে নিচ্ছে। অসম্মান যে' ইচ্ছাকৃত তা বুঝতে বাকি রইল না । ট্যাবি কুকুরটা তার প্রথম-মৈত্রীর উচ্ছ্বাসে বাধা পেয়ে কেটির পায়ের কাছে শুয়ে একটু নিদ্রার চেষ্টা করছিল । অমিতর আগমনে তাকে সংবর্ধনা করবার জন্তে আবার অসংষত হয়ে উঠল । সিসি আবার তাকে শাসনের দ্বারা বুঝিয়ে দিলে যে, এই সম্ভাবপ্রকাশের প্রণালীটা এপানে সমাদৃত হবে না । দুই সখীর প্রতি দৃকপাত মাত্র না করে “মাসি” বলে দূর থেকে ডেকেই অমিত যোগমায়ার পায়ের কাছে পড়ে তার পায়ের ধুলো নিলে । এ-সময়ে এমন করে প্রণাম করা তার প্রথার মধ্যে ছিল না । জিজ্ঞাসা করলে, “মাসিম, লাবণ্য কোথায় ?” “কী জানি, বাছা, ঘরের মধ্যে কোথায় আছে।” “এখনও তো তার পড়বার সময় শেষ হয় নি ।” “বোধ হয় এরা আসাতে ছুটি নিয়ে ঘরে গেছে ।” “চলো, একবার দেখে আসি সে কী করছে ।" যোগমায়াকে নিয়ে অমিত ঘরে গেল । সম্মুখে যে আর-কোনো সজীব পদার্থ আছে সেটা সে সম্পূর্ণই অস্বীকার করলে | সিসি একটু চেচিয়ে বলে উঠল, “অপমান। চলে, কেটি, ঘরে যাই ।” কেটিও কম জলে নি । কিন্তু শেষ পর্যস্ত না দেপে সে যেতে চায় না । সিসি বললে, “কোনো ফল হবে না।” কেটির বড়ো বড়ো চোপ বিস্ফারিত হয়ে উঠল, বললে, “হতেই হবে কল ।” আরও খানিকট সময় গেল। সিসি আবার বললে, “চলে ভাই, আর একটুও থাকতে ইচ্ছে করছে না।” কেটি বারাণ্ডায় ধন্ন দিয়ে বসে রইল। বললে, “এইখান দিয়ে তাকে বেরোতেই তো হবে।” অবশেষে বেরিয়ে এল অমিত, সঙ্গে নিয়ে এল লাবণ্যকে । লাবণ্যর মুখে একটি নির্লিপ্ত শান্তি । তাতে একটুও রাগ নেই, স্পর্ধা নেই, অভিমান নেই। যোগমায়া পিছনের ঘরেই ছিলেন, তার বেরোবার ইচ্ছা ছিল না। অমিত র্তাকে ধরে নিয়ে এল ।