পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী " . . 8 بنا (یہ তাহা আমরা ভুলিয়া যাই । এবং কটু ভংসনার পর সংগত প্রার্থন পূরণ করিতেও গবর্মেন্টের মনে দ্বিধা উপস্থিত হয়, পাছে প্রজার স্পর্ধ বাড়িয়া উঠে । ইহার প্রধান কারণ, মনের ভিতরে এমন একটা অসদভাব জন্মিয়া গিয়াছে এবং প্রতিদিন তীব্রতর হইয়া উঠিতেছে যে, উভয় পক্ষেরই কর্তব্যপালন ক্রমশই কিছু কিছু • করিয়া দুরূহ হইতেছে। রাজাপ্রজার এই অহরহ কলহ দেখিতেও কিছুমাত্র ভালো হইতেছে না। গবর্মেন্টও বাহত যেমনই হউক, মনে মনে যে এ-সম্বন্ধে উদাসীন তাহা বিশ্বাস হয় না। কিন্তু উপায় কী ? ব্রিটিশ চরিত্র, হাজার হউক, মচুন্যচরিত্র তো বটে। ভাবিয়া দেখিলে এ সমস্তার মীমাংসা সহজ নহে । সব-প্রথম সংকট বর্ণ লইয়া। শরীরের বর্ণটা যেমন ধুইয়া-মুছিয়া কিছুতেই দূর করা যায় না তেমনি বর্ণসখন্ধীয় যে সংস্কার সেটা মন হইতে তাড়ানো বড়ো কঠিন । শ্বেতকায় আর্যগণ কালে রংটাকে বহু সহস্ৰ বৎসর ধরিয়া ঘৃণাচক্ষে দেখিয়া আসিতেছেন । এই অবসরে বেদের ইংরেজি তর্জমা এবং এনসাইক্লোপীডিয়া হইতে এ-সম্বন্ধে অধ্যায়, সূত্র এবং পৃষ্ঠাঙ্ক সমেত উংকট প্রমাণ আহরণ করিয়া পাঠকদের প্রতি দৌরাত্ম্য করিতে চাহি না–কথাটা সকলেই বুঝিবেন । শ্বেতকৃষ্ণে যেন দিনরাত্রির ভেদ । শ্বেতজাতি দিনের ন্যায় সদাজাগ্রত, কর্মশীল, অনুসন্ধানতংপর, আর কৃষ্ণজাতি রাত্রির স্তায় নিশ্চেষ্ট, কর্মহীন, স্বপ্নকুহকে আবিষ্ট । এই হামা-প্রকৃতিতে হয়তে রান্ত্রির মতো একটা গভীরতা, মাধুর্য, স্নিগ্ধ করুণ এবং সুনিবিড় আত্মীয়তার ভাব আছে, দুর্ভাগ্যক্রমে ব্যস্ত চঞ্চল শ্বেতাঙ্গের তাহা আবিষ্কার করিবার অবসর নাই এবং তাহার কাছে ইহার যথেষ্ট মূল্যও নাই । তাহাদিগকে এ-কথা বলিয়াও কোনো ফল নাই যে, কালো গরুতেও সাদা দুধ দিয়া থাকে এবং ভিন্ন বর্ণের মধ্যে হৃদয়ের একটা গভীর ঐক্য আছে । কিন্তু কাঞ্জ নাই এ-সকল ওরিয়েণ্টাল উপমা-তুলনায়—কথাটা এই যে, কালো রং দেখিবামাত্র শ্বেতজাতির মন কিছু বিমুখ না হইয়া থাকিতে পারে না । । তার পরে বসনভূষণ-অভ্যাস-আচারে প্রত্যেক বিষয়েই এমন সকল বৈসাদৃত আছে যাহা হৃদয়কে কেবলই প্রতিহত করিতে থাকে। শরীর অর্ধবৃত রাধিয়াও যে মনের অনেক সদগুণ পোষণ করা যাইতে পারে, মনের গুণগুলা যে ছায়াপ্রিয় শৌখিন জাতীয় উদ্ভিজ্জের মতো নহে, তাহাকে যে জিনবনাতের দ্বারা না মুড়িলেও অন্য উপায়ে রক্ষা করা যায় সে-সমস্ত তর্ক করা মিথ্যা । ইহা তর্কের কথা নহে সংস্কারের কথা । এক, নিকট-সংস্রবে এই সংস্কারের বল কতকটা অভিভূত হইতে পারে। কিন্তু