পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రివ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী চালাইতে এবং কামান পাতিতে শিথিয়াছ কিন্তু মানবের প্রকৃত সভ্যতা আধ্যাত্মিক সভ্যতা, সেই সভ্যতায় আমরা তোমাদের অপেক্ষ অনেক শ্রেষ্ঠতর। অধ্যাত্মবিষ্ঠার ক খ হইতে আমরা তোমাদিগকে শিখাইতে পারি। তোমরা যে আমাদিগকে স্বল্পসভ্য বলিয়া অবজ্ঞা কর সে তোমাদের অন্ধ মূঢ়তাবশত, হিন্দুজাতির শ্রেষ্ঠতা ধারণা করিবার শক্তিও তোমাদের নাই। আমরা পুনরায় চক্ষু মুদ্রিত করিয়া ধ্যানে বসিব । আজ হইতে তোমাদের যুরোপের মুখাসক্ত চপল সভ্যতার বাল্যলীলা হইতে সমস্ত দৃষ্টি ফিরাইয়া আনিয়া তাহাকে কেবলমাত্র নাসা গ্রভাগে নিবিষ্ট করিয়া রাখিলাম। তোমরা কাছারি করো, আপিস করে, দোকান করে, নাচে, খেলো, মারো, ধরে, হুটোপাটি করে এবং সিমলার শৈলশিপরে বিলাসের স্বৰ্গপুর নির্মাণ করিয়া সভ্যতামদে প্রমত্ত হইয়া থাকো । দরিদ্র বঞ্চিত মানব আপনাকে এইরূপে সাম্বন দিতে চেষ্টা করে। যে শ্রেষ্ঠতার সহিত প্রেম নাই সে শ্রেষ্ঠত সে কিছুতেই বহন করিতে সন্মত হয় মা । কারণ, তাহার অস্তরে একটি সহজ জ্ঞান আছে তদ্বারা সে জানে যে, এইরূপ শুষ্ক শ্রেষ্ঠতা বাধ্য হইয়৷ বহন করিতে হইলে ক্রমশ ভারবাহী মূঢ় পশুর সমতুল্য হইয়া যাইতে হইবে । কিন্তু কে বলিতে পারে এই মানসিক বিদ্রোহই বিধাতার অভিপ্রেত নহে । তিনি ক্ষুদ্র পৃথিবীকে যেরূপ প্রচণ্ড স্বর্যের প্রবল আকর্ষণ হইতে রক্ষা করিতেছেন, তাহার অন্তরে একটি প্রতিকুল শক্তি নিহিত করিয়া দিয়াছেন, সেই শক্তির বলে সে স্থধের আলোক-উত্তাপ ভোগ করিয়াও আপনার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিতেছে এবং স্থধের ন্যায় প্রতাপশালী হইবার চেষ্টা না করিয়া আপনার অন্তর্নিহিত স্নেহশক্তি দ্বারা শুমলা শস্যশালিনী কোমলা মাতৃরূপিণী হইয়া উঠিয়াছে, বিধাতা বোধ করি সেইরূপ আমাদিগকেও ইংরেজের বৃহৎ আকর্ষণের কবল হইতে রক্ষা করিবার উদযোগ করিয়াছেন । বোধ করি তাহার অভিপ্রায় এই যে, আমরা ইংরেজি সভ্যতার জ্ঞানালোকে নিজের স্বাতন্ত্র্যকেই সমুজ্জল করিয়া তুলিব । তাহার লক্ষণও দেখা যায় । ইংরেজের সহিত সংঘর্ষ আমাদের অন্তরে যে একটি উত্তাপ সঞ্চার করিয়া দিয়াছে তারা আমাদের মুমু জীবনীশক্তি পুনরায় সচেতন হইয়া উঠিতেছে। আমাদের অন্তরের মধ্যে আমাদের যে-সমস্ত বিশেষ ক্ষমতা অন্ধ ও জড়বং হইয়া অবস্থান করিতেছিল তাহারা নূতন আলোকে পুনরায় আপনাকে চিনিতে পারিতেছে। স্বাধীন যুক্তিতর্কবিচারে আমাদের মানসভূমি আমাদের নিকট নবাবিষ্কৃত হইতেছে। দীর্ঘ প্রলয়রাত্রির অবসানে অরুণোদয়ে যেন আমরা আমাদেরই দেশ আবিষ্কার করিতে বাহির হইয়াছি। প্ৰতিশ্রুতি-কাব্যপুরাণ-ইতিহাসদর্শনের প্রাচীন