পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*A* রাজা প্রজা 8o Q করে। তাছার বলে, আমরা কিছু জোরের সহিত যে-কাজটা করিতে চাই ইংলণ্ডীয় ভ্রাতারা তাহাতে বাধা দিয়া বলে । সকল কথাতেই নৈতিক কৈফিয়ত দিতে হয়। যখন দম্য ব্লেক সমুদ্রদিগবিজয় করিয়া বেড়াইত, যখন ক্লাইব ভারতভূমিতে বৃটিশ ধ্বজ খাড়া করিয়া দাড়াইল তখন নীতির কৈফিয়ত দিতে হইলে ঘরের বাহিরে ইংরেজের ছেলের এক ছটাক জমি মিলিত না । কিন্তু এমন করিয়া যতই বিলাপ কর কিছুতেই আর সেই অখণ্ড দোর্দণ্ড বলের বয়সে ফিরিয়া যাইতে পরিবে না। এখন কোনো জুলুমের কাজ করিতে বলিলেই সমস্ত দেশ ব্যাপিয়া একটা দ্বিধা উপস্থিত হইবে । এখন যদি কোনো নিপীড়িত ব্যক্তি ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে তবে স্বার্থহানির সম্ভাবনা থাকিলেও, নিদেন, গুটিকতক লোকও তাহার সদৃবিচার করিতে উষ্ঠত হইবে । এখন একজন ব্যক্তিও যদি ন্যায়ের দোহাই দিয়া উঠিয়া দাড়ায় তবে প্রবল স্বার্থপরতা হয় লজ্জায় কিঞ্চিৎ সংকুচিত হইয়া পড়ে, নয়, ন্যায়েরই ছদ্মবেশ ধারণ করিতে চেষ্টা করে । অস্তায় অনীতি যখন বলের সহিত আপনাকে অসংকোচে প্রকাশ করিত তখন বল ব্যতীত তাহার আর কোনো প্রতিদ্বদ্বী ছিল না, কিন্তু যখনই সে আপনাকে আপনি গোপন করিতে চেষ্টা করে এবং বলের সহিত আপন কুটুম্বিত অস্বীকার করিয়া ন্যায়কে আপন পক্ষে টানিয়া বলী হইতে চায় তখনই সে আপনি আপনার শক্রতা সাধন করে । এইজন্য বিদেশে ইংরেজ আজকাল কিঞ্চিং দুর্বল এবং সেজন্য সে সর্বদা অধৈর্য প্রকাশ করে। আমরাও সেইজন্য ইংরেজের দোষ পাইলে তাহাকে দোষী করিতে সাহসী হই । সেজন্য ইংরেজ প্রভুরা কিছু রাগ করে । তাহারা বলে, নবাব যখন যথেচ্ছাচারী ছিল, বর্গি যখন লুটপাট করিত, ঠগি যখন গলায় ফাসি লাগাইত তখন তোমাদের কনগ্রেসের সভাপতি এবং সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিল কোথায় । কোথাও ছিল না এবং থাকিলেও কোনো ফল হইত না । তখন গোপন বিদ্রোহী ছিল, মারহাট্ট এবং রাজপুত ছিল, তখন বলের বিরুদ্ধে বল ছাড়া গতি ছিল না। তখন চোরার নিকট ধর্মের কাহিনী উত্থাপন করিবার কথা কাহারও মনেও উদয় হইত না । n আজ যে কনগ্রেস এবং সংবাদপত্রের অভু্যদয় হইয়াছে তাহার কারণই এই যে, ইংরেজের মধ্যে অখণ্ড বলের প্রাদুর্ভাব নাই। এখন চোরকে ধর্মের কাহিনী বলিলে যদি বা সে না মানে তবু তার একটা ধর্মসংগত জবাব দিতে চেষ্টা করে এবং ভালো জবাবট দিতে না পারিলে তেমন বলের সহিত কাজ করিতে পারে না । অতএব যে-সকল ইংরেজ ভারতবর্ষীয় সভাসমিতি ও সংবাদপত্রের বাহুল্যবিস্তারে আক্ষেপ প্রকাশ করে, তাহারা যথার্থপক্ষে স্বদেশীয়দের জাতীয় প্রকৃতিতে ধর্মবুদ্ধির অস্তিত্ব লইয়া দুঃখ