পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 e bفي রবীন্দ্র- রচনাবলী করে। তাহারা যে বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়াছে, তাহারা যে নিজের ক্রটির জন্ত নিজে जछि उ হইতে শিখিয়াছে ইহাই তাহাদের নিকট শোচনীয় বলিয়া বোধ হয় এক হিসাবে ইহার মধ্যে কতকটা শোচনীয়তা আছে। এদিকে ক্ষুধার জালাও । নিবারণ হয় নাই ওদিকে পরের অন্নও কাড়িতে পারিব না এ এক বিষম সংকট। জাতির পক্ষে নিজের জীবনরক্ষা এবং ধর্মরক্ষা উভয়ই পরমাবস্তক । পরের প্রতি অন্যায়ীচরণ করিলে যে পরের ক্ষতি হয় তাহা নহে নিজেদের ধর্মের আদর্শ ক্রমশ ভিত্তিহীন হইয় পড়ে। দাসদের প্রতি যাহারা অত্যাচার করে তাহারা নিজের চরিত্র ধ্বংস করে। ধর্মকে সর্বপ্রষত্বে বলবান না রাখিলে আপনাদের মধ্যে জাতীয় বন্ধন ক্রমশ শিথিল হইয়া পড়িতে থাকে। অপর পক্ষে, পেট ভরিয়া পাইতেও হইবে। ক্রমে বংশবৃদ্ধি ও স্থানাভাব হইতেছে এবং সভ্যতার উন্নতিসহকারে জীবনের আবশ্বক উপকরণ অতিরিক্ত বাড়িয়া চলিয়াছে । অতএব পচিশ কোটি ভারতবাসীর অদৃষ্টে যাহাই থাক মোটাবেতনের ইংরেজ কর্মচারীকে এক্সচেঞ্জের ক্ষতিপূরণস্বরূপ রাশি রাশি টাকা ধরিয়া দিতে হইবে। সেইজন্ত রাজকোষে যদি টাকার অনটন পড়ে তবে পণ্যদ্রব্যে মাসুল বসানো আবশ্বক হুইবে । কিন্তু তাহাতে যদি ল্যাঙ্কাশিয়রের কিঞ্চিং অসুবিধা হয় তবে তুলার উপর মাসুল বসানো যাইতে পারে। তৎপরিবর্তে বরঞ্চ পবলিক ওআর্কস কিছু থাটো করিয়া এবং দুভিক্ষফণ্ড বাজেয়াপ্ত করিয়া কাজ চালাইয়া লইতে হইবে । একদিকে ইংরেজ কর্মচারীদিগেরও কষ্ট চক্ষে দেখা যায় না, অপরদিকে ল্যাঙ্কাশিয়রের ক্ষতিও প্রাণে সহ হয় না। এদিকে আবার পঞ্চবিংশতিকোটি হতভাগ্যের জন্য যে কিছুমাত্র দুঃখ হয় না তাহাও নহে। ধর্মনীতি এমন সংকটেও ফেলে ! অমনি খবরের কাগজে ঢাক বাজিয়া যায়, আহতনীড় পক্ষিসমাজের ন্যায় সভ্যস্থলে কর্ণবধির কলকলধ্বনি উখিত হয়, ইংরেজ ভারি চটিয়া উঠে । যখন কাজটা ন্যায়সংগত হইতেছে না বলিয়া মন বলিতেছে অথচ না করিয়াও এড়াইবার জো নাই সেই সময়ে ধর্মের দোহাই পাড়িতে থাকিলে বিষম রাগ হয়। তপন রিক্তহন্তে কোনো যুক্তি-অস্ত্র না থাকাতে একেবারে ঘুষি মারিতে ইচ্ছা করে। কেবল মানুষটা নহে ধৰ্মশাস্ত্রটার উপরেও দিক ধরিয়া যায়। ভারত-মন্ত্রিসভার সভাপতি এবং অনেক মাতব্বর সভ্য ভাবগতিকে বলিয়াছেন যে, কেবল ভারতবর্ষের নহে সমস্ত ইংরেজ-রাজ্যের মুখ চাহিয়া যপন আইন করিতে হইবে তখন কেবল স্থানীয় ন্যায়-অন্যায় বিচার করিলে চলিবে না এবং করিলে তাহ টিকিবেও না। ল্যাঙ্কাশিয়র স্বপ্ন নহে। ভারতবর্ষের দুঃখ যেমন সত্য ল্যাঙ্কাশিয়রের লাভও তেমনি