পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8.శి রবীন্দ্র-রচনাবলী হত্যাপরাধে ইংরেজের শাস্তি পাইবার সম্ভাবনা অনেক অধিক হইত। ষে-জাতিকে নিজেদের অপেক্ষ অনেক নিকৃষ্টতর বলিয়া বিবেচনা করা যায়, সে-জাতি সম্বন্ধে আইনের ধারায় অপক্ষপাতের বিধান থাকিলেও বিচারকের অন্ত:করণে অপক্ষপাত রক্ষিত হওয়া কঠিন হইয়া উঠে। সে-স্থলে প্রমাণের সামান্য ক্রটি, সাক্ষ্যের সামান্ত খলন এবং আইনের ভাষাগত তিলমাত্র ছিদ্রও স্বভাবতই এত বৃহং হুইয়া উঠে যে, ইংরেজ অপরাধী অনায়াসে তাহার মধ্যে দিয়া গলিয়া বাহির হইয়া যাইতে পারে। আমাদের দেশের লোকের পর্যবেক্ষণশক্তি এবং ঘটনাস্মৃতি তেমন পরিষ্কার এবং প্রবল নহে ; আমাদের স্বভাবের মধ্যে মানসিক শৈথিলা এবং কল্পনার উচ্ছম্বলতা আছে এ-দোষ স্বীকার করিতেই হয়। একটা ঘটনার মধ্যে উপস্থিত থাকিয়াও তাহার সমস্ত আনুপূর্বিক পরম্পর আমাদের মনে মুদ্রিত হইয়া যায় না--এইজন্য আমাদের বর্ণনার মধ্যে অসংগতি ও দ্বিধা থাকে—এবং ভয় অথবা তর্কের মুপে পরিচিত সত্য ঘটনারও স্বত্র হারাইয়া ফেলি। এইজন্য আমাদের দেশীয় সাক্ষ্যর সত্যমিথ্য স্থঙ্করূপে নির্ধারণ করা বিদেশীয় বিচারকের পক্ষে সর্বদাই কঠিন । তাহার উপরে অভিযুক্ত যখন স্বদেশী তপন কঠিনত শতসহস্ৰগুণে বাড়িয়া উঠে । আরও বিশেষত যপন স্বভাবতই ইংরেজের নিকটে স্বল্পাবৃত স্বল্পাহারা স্বল্পমান স্বল্পবল ভারতবাসীর “প্রাণের পবিত্রতা” স্বদেশীয়ের তুলনায় ক্ষুদ্রতমভগ্নাংশপরিমিত, তপন ভারতবর্ষের পক্ষে যথোপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা এক প্রকার অসম্ভব হইয় পড়ে। অতএব একে আমাদের সাক্ষ্য দুর্বল, তাহাতে প্লীহা প্রভৃতি আমাদের শারারযন্ত্রগুলিরও বিস্তর ক্রটি আবিষ্কৃত ইয়া থাকে, সুতরাং আমরা সহজে মারাও পড়ি এবং তাহার বিচার পাওয়াও তামাদের দ্বার দুঃসাধ্য হয় । লজ্জা এবং দুঃখ সহকারে এ-সমস্ত দুর্বলতা আমাদিগকে স্বীকার করিতে হয় কিন্তু সেই সঙ্গে এ সত্যটুকুও প্রকাশ করিয়া বলা উচিত যে, উপযুপরি এই সকল ঘটনায় দেশের লোকের চিত্ত নিরতিশয ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিতেছে । সাধারণ লোকে আইনের এবং প্রমাণের সূক্ষ্মবিচার করিতে পারে না। ভারতবর্মীয়কে হত্যা করিয়া কোনো ইংরেজেরই প্রাণদণ্ড হয় না এই তথাটি বারংবার এবং অল্পকালের মধ্যে ঘন ঘন ਸ਼ਾਸ করিয়া তাহাদের মনে ইংরেজের অপক্ষপাত ন্যায়পরতা সম্বন্ধে সুতীব্র সন্দেহের উদয় হয় । সাধারণ লোকের মৃঢ়তার কেন দোষ দিই, গবর্মেন্ট অনুরূপ স্থলে কী করেন ? যদি তাহার দেখেন কোনো ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অধিকাংশসংপ্যক আসামিকে খালাস দিতেছেন, তখন তাহার এমন বিবেচনা করেন না যে, সম্ভবত উক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট