পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8XV রবীন্দ্র-রচনাবলী অল্পকাল হইল ইহার অনুরূপ ঘটনা পাবনায় ঘটিয়াছিল। সেখানে মুনিসিপালিটির খেয়াঘাটের কোনো ব্রাহ্মণ কর্মচারী পুলিস সাহেবের পাখ-টানা বেহারার নিকট উচিত মামুল আদায় করাতে পুলিস সাহেব তাহাকে নিজের ঘরে লইয় লাঞ্ছনার একশেষ করিয়াছিলেন ; বাঙালি ম্যাজিস্ট্রেট সেই অপরাধী ইংরেজের ' কোনোরূপ দ গুবিধান না করিয়া কেবলমাত্র সতর্ক করিয়া ছাড়িয়া দিয়াছিলেন । অথচ যখন পাখা-টানা বেহার উক্ত ব্রাহ্মণের নামে উপদ্রবের নালিশ আনে তপন তিনি ব্রাহ্মণকে জরিমানা না করিয়া ছাড়েন নাই । যে কারণবশত বাঙালি ম্যাজিস্ট্রেট প্রবল ইংরেজ অপরাধীকে সতর্ক এবং অক্ষম বাঙালি অভিযুক্তকে জরিমানা করিয়া থাকেন, সেই কারণটি আমাদের জাতির মর্মে মর্মে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া আছে । আমাদের স্বজাতিকে যে সম্মান আমরা নিজে দিতে জানি না, আমরা আশা করি এবং আবদার করি সেই সম্মান ইংরেজ আমাদিগকে যাচিয়া সাধিয়া দিবে। এক বাঙালি যপন নীরবে মার পায় এবং অন্য বাঙালি যপন তাই কৌতুহলভরে দেপে, এবং স্বহস্তে অপমানের প্রতিকার সাধন বাঙালির নিকট প্রত্যাশাই করা যায় না এ-কথা যখন বাঙালি বিনা লজ্জায় ইঙ্গিতেও স্বীকার করে তপন ইহা বুঝিতে হইবে যে, ইংরেজের দ্বারা হত ও আহ ত হইবার মূল প্রধান কারণ আমাদের মিঞ্জের স্বভাবের মধ্যে—গবমেণ্ট কোনো আইনের দ্বারা বিচারের দ্বার। তাই দূর করিতে পারিবেন না । আমরা অনেক সময় ইংরেজ কর্তৃক অপমানবৃত্তাস্ত শুনিলে আক্ষেপ করিয়া বলিয়া থাকি, কোনো ইংরেজের প্রতি ইংরেজ এমন ব্যবহার করিত না । করিত মা বটে, কিন্তু ইংরেজের উপর রাগ করিতে বসার অপেক্ষ নিজের প্রতি রাগ করিতে বসিলে অধিক ফল পাওয়া যায়। যে যে কারণবশত একজন ইংরেজ সহজে আর-একজন ইংরেজের গায়ে হাত তুলিতে সাহস করে না সেই কারণগুলি থাকিলে আমরাও অনুরূপ আচরণ প্রাপ্ত হইতে পারিতাম, সামুনাসিক স্বরে এত অধিক কাল্লাক করিতে হইত না । ዛ বাঙালির প্রতি বাঙালি কিরূপ ব্যবহার করে সেইটে গোড়ায় দেখা উচিত। কারণ তাহারই উপর আমাদের সমস্ত শিক্ষা নির্ভর করে। আমরা কি আমাদের ভূতাদিগকে প্রহার করি না, আমাদের অধীনস্থ ব্যক্তিদের প্রতি ঔদ্ধত্য এবং নিয়শ্রেণীস্থদিগের প্রতি সর্বদ অসম্মান প্রকাশ করি না ? আমাদের সমাজ স্তরে স্তরে উচ্চে নীচে বিভক্ত, যেব্যক্তি কিছুমাত্র উচ্চে আছে সে নিম্নতর ব্যক্তির নিকট হইতে অপরিমিত অধীনতা