পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ुं 8૨૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী ছোটোবড়ে যন্ত্রীগুলি যে আয়ােপাত্ত বিচলিত হইয়া উঠিয়াছিলেন তাহা তাহার বারংবার অস্বীকার করিলেও লক্ষণে স্পষ্টই প্রকাশ পাইয়াছিল এখনও প্রকাশ পাইতেছে। এবং সাধারণ ভারতবর্ষীয় ইংরেজের মনে বিবিধ স্বাভাবিক কারণে একবার এইরূপ বিকার উপস্থিত হইলে তাহার যে ফল সে ফলিতে থাকিবেই – ক্যাম্রাট যেমন সমুদ্রতরঙ্গকে নিয়মিত করিতে পারেন নাই গবর্মেন্টও সেইরূপ স্বাভাবিক নিয়মকে বাধা দিতে পারিবেন না । প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কেনই বা বৃথা আন্দোলন করা এবং আমারই বা এ প্রবন্ধ লিখিতে বসিবার প্রয়োজন কী ছিল ? গবর্মেন্টের নিকট সকরুণ অথবা সাভিমান স্বরে আবেদন বা অভিযোগ করিবার জন্য প্রবন্ধ লিখার কোনো আবশ্বক নাই সে-কথা আমি সহস্রবার স্বীকার করি । আমাদের এই প্রবন্ধ কেবল আমাদের স্বজাতীয়ের জন্য । আমরা নিজেরা ব্যতীত আমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় ও অবিচারের প্রতিকার কাহারও সাধ্যায়ত্ত নহে । ক্যাম্রাট সমুদ্রতরঙ্গকে যেখানে থামিতে বলিয়াছিলেন, সমুদ্রতরঙ্গ সেখানে থামে নাই—সে জড়শক্তির নিয়মান্তবর্তী হইয়া যথোপযুক্ত স্থানে গিয়া আঘাত করিয়াছিল। ক্যাম্রাট মুখের কথায় বা মন্ত্রোচারণে তাহাকে ফিরাইতে পারিতেন না বটে কিন্তু বাধ বাধিয়া তাহাকে প্রতিহত করিতে পারিতেন । স্বাভাবিক নিয়মান্তগত আঘাতপরম্পরাকে যদি অর্ধপথে বাধা দিতে হয় তবে আমাদিগকেও বাধ বধিতে হইবে । সকলকে এক হইতে হুইবে । সকলকে সমহাদয় হইয়া সমবেদন অনুভব করিতে হইবে । দল বাধিয়া যে বিপ্লব করিতে হইবে তাহা নহে— আমাদের সে শক্তিও নাই । কিন্তু দল বাধিলে যে একটা বৃহত্ত্ব এবং বল লাভ করা যায় তাহাকে লোকে শ্রদ্ধা না করিয়া থাকিতে পারে না । শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিতে না পারিলে সুবিচার আকর্ষণ করা বড়ো কঠিন । কিন্তু বালির বাধ বাধিবে কী করিয়া ? যাহারা বারংবার নিহত পরাহত হইয়াছে অথচ কোনোকালে সংহত হইতে শিপে নাই, যাহাদের সমাজের মধ্যে অনৈক্যের সহস্ৰ বিষবীজ নিহিত রহিয়াছে তাহাদিগকে কিসে বঁাধিতে পারিবে ? ইংরেজ ষে আমাদের মৰ্মবেদন অনুভব করিতে পারে না এবং ইংরেজ ঔষধের দ্বারা চিকিৎসার চেষ্ট না করিয়া কঠিন আঘাতের দ্বারা আমাদের হৃদয়ব্যথা চতুগুণ বধিত করিবার উযোগ করিতেছে এই বিশ্বাসে উত্তর হইতে দক্ষিণে এবং পূর্ব হইতে পশ্চিমে সমস্ত হিন্দুজাতির হৃদয় অলক্ষিতভাবে প্রতিদিন পরস্পর নিকটে আকৃষ্ট হইয়া আসিতেছে।