পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ミぐり রবীন্দ্র-রচনাবলী আজ পর্যন্ত সে ভয়ানক কাণ্ডের কোনো অদ্ধিসন্ধি পাওয়া গেল না । কাণ্ডটা সত্য অথবা স্বপ্ন ইহাই ভাবিয়া অবাক হইয়া বসিয়া আছি এমন সময় তারের খবর আসিল, রাজপ্রাসাদের গুপ্তচূড়া হইতে কোন এক অজ্ঞাত অপরিচিত বীভৎস আইন বিদ্যুতের মতো পড়িয়া নাটুভ্রাতৃযুগলকে ছো মারিয়া (s কোথায় অন্তর্ধান করিয়াছে। দেখিতে দেখিতে আকস্মিক গুরুবর্ষার মতো সমস্ত বম্বাই প্রদেশের মাথার উপরে কালো মেঘ নিবিড় হইয়া উঠিল এবং জবরদস্ত শাস্নের ঘন ঘন বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির আয়োজন-আড়ম্বরে আমরা ভাবিলাম, ভিতরে কী ঘটিয়াছে জানি না, কিন্তু বেশ দেখিতেছি, ব্যাপারটি সহজ নহে। মাহারাষ্ট্রার বড়ো ভয়ংকর জাত ! {} একদিকে পুরাতন আইন-শৃঙ্খলের মরিচ সাফ হইল আবার অন্যদিকে রাজকারখানায় নূতন লৌহখৃস্থল নির্মাণের ভীষণ হাতুড়ি-ধ্বনিতে সমস্ত ভারতবর্ষ কম্পান্বিত হইয়া উঠিয়াছে। একটা ভয়ানক ধুম পড়িয়া গেছে। আমরা এতই ভয়ংকর ! আমরা এতকাল বিপুল পৃথিবীকে অচলা বলিয়া বিশ্বাস করিতাম এবং এই প্রবল বসুন্ধরার প্রতি আমরা যতই নির্ভর ও যতই উপদ্রব করিয়াছি তিনি তাহ অকুষ্ঠিত প্রকাণ্ড শক্তিতে অনায়াসে বহন করিয়াছেন। একদিন নববর্ষার দুর্যোগে মেঘাবৃত অপরাহ্লে অকস্মাং আমাদের সেই চিরনির্ভরভূমি জানি না কোন নিগৃঢ় আশঙ্কায় কম্পান্বিত হইতে লাগিলেন। আমরা দেখিলাম তাহার সেই মুহূর্তকালের চাঞ্চলে আমাদের বহুকালের প্রিয় পুরাতন বাসস্থানগুলি ধূলিসাং হইল। গবর্মেন্টের অচলা নীতিও যদি অকস্মাং সামান্ত অথবা অনির্দেশু আতঙ্কে বিচলিত ও বিদীর্ণ হইয়া আমাদিগকে গ্রাস করিতে উদ্যত হয় তাহ হইলে তাহার শক্তি ও নীতির দৃঢ়তা সম্বন্ধে আমাদের চিরবিশ্বাস হঠাৎ প্রচণ্ড আঘাত প্রাপ্ত হয়। সেই আঘাতে প্রজার মনে ভয়সঞ্চার হওয়া সম্ভবপর কিন্তু সেই সঙ্গে নিজের প্রতিও তাহার অকস্মাৎ অত্যধিক মনোযোগ আকৃষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। হঠাৎ এ প্রশ্নট। আপনিই মনে উদয় হয় আমি না জানি কী ! সুতরাং ইহার মধ্যে আমাদের একটুখানি সাত্বনা আছে। কারণ, সম্পূর্ণ নিস্তেজ নিঃসত্ত্ব জাতির প্রতি বলপ্রয়োগ করা যেমন অনাবশ্বক, তেমনি তাহাকে শ্রদ্ধ করাও অসম্ভব । আমাদিগকে দমন করিবার জন্য অতিরিক্ত আয়োজন দেখিলে ন্যায়-অন্যায় বিচার-অবিচারের তর্ক দূরে রাখিয়া এ-কথা আমাদের স্বভাবতই মনে হয় যে, হয়তো আমাদের মধ্যে একটা শক্তির সম্ভাবনা আছে যাহা কেবল