পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা প্রজা 8ኟዓ মৃঢ়তাবশত আমরা সকল সময়ে উপলব্ধি করিতে পারি না । গবর্মেন্ট যখন চারি তরফ হইতেই কামান পাতিতেছেন তখন ইছা নিশ্চয় যে আমরা মশা নহি,--অস্থত মর মশা নহি । আমাদের স্বজাতির অন্তরে একটা প্রাণ একটা শক্তির সঞ্চার-সম্ভাবনা আমাদের পক্ষে পরমানন্দের বিষয় এ-কথা অস্বীকার করা এমন সুস্পষ্ট কপটতা যে, তাহা পলিসিস্বরূপে অনাবশ্বক এবং প্রবঞ্চনাস্বরূপে নিস্ফল । অতএব গবর্মেন্টের তরফ হইতে আমাদের কোনোপানে সেই শক্তির স্বীকার দেখিতে পাইলে নিরাশচিত্তে কিঞ্চিং গর্বের সঞ্চার না হইয়া থাকিতে পারে না । কিন্তু, হায়, এ গর্ব আমাদের পক্ষে সাংঘাতিক,—শুক্তির মুক্ত র ন্যায় ইহা আমাদের পক্ষে ব্যাধি,—উপযুক্ত ধীবররাজ আমাদের জঠরের মধ্যে কঠোর ছুরিকা চালাইয়া এই গর্বটুকু নিঃশেষে বাহির করিয়া লইয়া নিজেদের রাজমুকুটের উপরে স্থাপন করিবেন । ইংরেজ নিজের আদর্শে পরিমাপ করিয়া আমাদিগকে যে অযথা সম্মান দিতেছেন সে-সম্মান হয়তো আমাদের পক্ষে একই কালে পরিহাস এবং মৃত্যু। আমাদের যে-বল সন্দেহ করিয়া গবমেণ্ট আমাদের প্রতি বলপ্রয়োগ করিতেছেন সে-বল যদি আমাদের না থাকে তবে গবর্মেন্টের গুরুদণ্ডে আমরা নষ্ট হইয়া যাইব,—সে-বল যদি যথার্থ থাকে তবে দণ্ডের তাড়নায় তাহা উত্তরোত্তর দৃঢ় এবং গোপনে প্রবল হইবে। আমরা তো আমাদিগকে জানি, কিন্তু ইংরেজ আমাদিগকে জানেন না। না জানিবার ১০১ কারণ আছে—তাহা বিস্তারিত পর্যালোচনা করিবার প্রয়োজন নাই। মূল কথাটা এই, তাহারা আমাদিগকে জানেন না। আমরা পূর্বদেশী, র্তাহারা পশ্চিমদেশী । আমাদের মধ্যে যে কী হইতে কী হয়, কোথায় আঘাত লাগিলে কোনখানে ধোয়াইয় উঠে তাহ তাহারা ঠিক করিয়া বুঝিতে পারেন না। সেইজন্যই তাহাদের ভয় । আমাদের মধ্যে ভয়ংকরত্বের আর কোনো লক্ষণ নাই কেবল একটি আছে, আমরা অজ্ঞাত। আমরা স্তন্যপায়ী উদ্ভিজ্জাশী জীব, আমরা শান্ত সহিষ্ণু উদাসীন কিন্তু তবু আমাদিগকে বিশ্বাস করিতে নাই, কারণ আমরা প্রাচ্য আমরা দুজ্ঞের্য। সত্য যদি তাহাই হইবে, তবে হে রাজন, আমাদিগকে আরও কেন অজ্ঞেয় করিয়া তুলিতেছ? যদি রজ্জতে সর্পভ্রম ঘটিয়া থাকে তবে তাড়াতাড়ি ঘরের প্রদীপ নিবাইয়া দিয়া ভয়কে আরও পরিব্যাপ্ত করিয়া তুলিতেছ কেন ? যে একমাত্র উপায়ে আমরা আত্মপ্রকাশ করিতে পারি, তোমাদের নিকট আপনাকে পরিচিত করিতে পারি তাহা রোধ করিয়া ফল কী ? • , ,