পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՀԵ রবীন্দ্র-রচনাবলী সিপাহিবিদ্রোহের পূর্বে হাতে হাতে যে-রুটি বিলি হইয়াছিল তাহাতে একটি অক্ষরও লেখা ছিল না—সেই নির্বাক নিরক্ষর সংবাদপত্রই কি যথার্থ ভয়ংকর নহে? সপের গতি গোপন এবং দংশন নিঃশব্দ, সেইজন্যই কি তাহ নিদারুণ নহে? সংবাদপত্র যতই অধিক এবং যতই অবাধ হইবে স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে দেশ ততই আত্মগোপন করিতে পরিবে না । যদি কখনো কোনো ঘনান্ধকার অমাবস্তারাত্রে আমাদের অবলা ভারতভূমি দুরাশার দুঃসাহসে উন্মাদিনী হইয়া বিপ্লবাভিসারে যাত্র করে, তবে সিংহদ্বারের কুকুর না ডাকিতেও পারে, রাজার প্রহরী না জাগিতেও পারে, পুররক্ষক কোতোয়াল তাহাকে না চিনিতেও পারে, কিন্তু তাহার নিজেরই সর্বাঙ্গের কঙ্কণকিঙ্কিণীসৃপুরকেয়ুর, তাহার বিচিত্র ভাষার বিচিত্র সংবাদপত্রগুলি কিছু-না-কিছু বাজিয়া উঠিবেই, নিষেধ মানিবে না। প্রহরী যদি নিজহস্তে সেই মুখর ভূষণগুলির ধ্বনি রোধ করিয়া দেন তবে তাহার নিদ্রার সুযোগ হইতে পারে কিন্তু পাহারার কী সুবিধা হইবে জানি না । কিন্তু পাহারা দিবার ভার যে জাগ্রত লোকটির হাতে, পাহারা দিবার প্রণালীও তিনি স্থির করিবেন ; সে-সম্বন্ধে বিজ্ঞভাবে পরামর্শ দেওয়া আমার পক্ষে নিরতিশয় ধুষ্টত এবং সম্ভবত তাহা নিরাপদও নহে । অতএব মাতৃভাষায় আমার এই দুর্বল উদ্যমের মধ্যে সে দুশ্চেষ্টা নাই। তবে আমার এই ক্ষীণ, ক্ষুদ্র, ব্যর্থ অথচ বিপংসংকুল বাচালত। কেন ? সে কেবল, প্রবলের ভয় দুর্বলের পক্ষে কী ভয়ংকর তাহাই স্মরণ করিয়া । ইহার একটি ক্ষুদ্র দৃষ্টান্ত এখানে অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। কিছুদিন হইল একদল ইতরশ্রেণীর অবিবেচক মুসলমান কলিকাতার রাজপথে লোষ্ট্রপগুহুস্তে উপদ্রবের চেষ্টা করিয়াছিল। তাহার মধ্যে বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, উপদ্রবের লক্ষ্যটা বিশেষরূপে ইংরেজেরই প্রতি। তাহাদের শাস্তিও যথেষ্ট হইয়াছিল। প্রবাদ আছে, ইটটি মারিলেই পাটকেলটি থাইতে হয়, কিন্তু মূঢ়গণ ষ্টটটি মারিয়া পাটকেলের অপেক্ষা অনেক শক্ত শক্ত জিনিস খাইয়াছিল। অপরাধ করিল দণ্ড পাইল কিন্তু ব্যাপারটা কী আজ পর্যন্ত স্পষ্ট বুঝা গেল না । এই নিম্নশ্রেণীর মুসলমানগণ সংবাদপত্র পড়েও না, সংবাদপত্রে লেখেও না —একটা ছোটে বড়ো কাগু হইয়া গেল অথচ এই মৃক নির্বাক প্রজাসম্প্রদায়ের মনের কথা কিছুই বোঝা গেল না । ব্যাপারটি রহস্তাবৃত রহিল বলিয়াই সাধারণের নিকট তাহার একটা অযথা এবং কৃত্রিম গৌরব জন্মিল। কৌতুহলী কল্পনা হারিসন রোডের প্রান্ত হইতে আরম্ভ করিয়া তুরস্কের অর্ধচন্দ্রশিধর রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত সম্ভব ও অসম্ভব অনুমানকে শাখাপল্লবায়িত করিয়া চলিল। ব্যাপারটি রহস্তাবৃত রছিল বলিয়াই আতঙ্কচকিত ইংরেজি কাগজ কেহ বলিল, ইহা কনগ্রেসের সহিত যোগবন্ধ রাষ্ট্রবিপ্লবের স্বচন, কেহ বলিল, মুসলমানদের বসতিগুলা একেবারে উড়াইয়া পুড়াইয়