পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা প্রজা 8Հs দেওয়া যাক, কেহ বলিল, এমন নিদারুণ বিপংপাতের সময় তুহিনাবৃত শৈলশিখরের উপর বড়েলাটসাহেবের এতটা সুশীতল হইয়া বসিয়া থাকা উচিত হয় না। রহস্তই অনিশ্চিত ভয়ের প্রধান আশ্রয়স্থান—এবং প্রবল ব্যক্তির অনিশ্চিত ভয় দুর্বল ব্যক্তির নিশ্চিত মৃত্যু। রুদ্ধবাক সংবাদপত্রের মাঝখানে রহস্তান্ধকারে আচ্ছন্ন হইয়া থাকা আমাদের পক্ষে বড়োই ভয়ংকর অবস্থা । তাহাতে করিয়া আমাদের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ রাজপুরুষদের চক্ষে সংশয়ান্ধকারে অত্যন্ত কৃষ্ণবর্ণ দেখাইবে । দুরপনেয় অবিশ্বাসে রাজদণ্ড উত্তরোত্তর খরধার হইয়া উঠিবে এবং প্রজার হৃদয় বিষাদে ভারাক্রাস্ত ও নির্বাক নৈরাস্তে বিষতিক্ত হইতে থাকিবে । আমরা ইংরেজের একান্ত অধীন প্রজ, কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম তাহার দাসত্ব করে না । আঘাত করিলে আমরা বেদন পাইব ; ইংরেজ হাজার চক্ষু রক্তবর্ণ করিলেও এ নিয়মটাকে দেশান্তরিত করিতে পারিবেন না । র্তাহার রাগ করিয়া আঘাতের মাত্রা বাড়াইতে পারেন, কিন্তু বেদনার মাত্রাও সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়া উঠিবে। কারণ, সে বিধির নিয়ম ; পিনাল কোডে তাহার কোনো নিষেধ নাই। অন্তর্দাহ বাক্যে প্রকাশ না হইলে আস্তরে সঞ্চিত হইতে থাকে। সেইরূপ অস্বাস্থ্যকর অস্বাভাবিক অবস্থায় রাজাপ্রজার সম্বন্ধ যে কিরূপ বিরুত হইবে তাহা কল্পনা করিয়া আমরা ভীত হইতেছি । কিন্তু এই অনির্দিষ্ট সংশয়ের অবস্থা সর্বাপেক্ষ প্রধান অমঙ্গল নহে। আমাদের পক্ষে ইহা অপেক্ষা গুরুতর অশুভ আছে । মানবচরিত্রের উপরে পরাধীনতার অবনতিকর ফল আছেই তাহা আমরা ইংরেজের নিকট হইতেই শিখিয়াছি। অসত্যাচরণ কপটতা অধীন জাতির আত্মরক্ষার অসুস্বরূপ হইয় তাহার আত্মসম্মানকে তাহার মন্তব্যত্বকে নিশ্চিতরূপে নষ্ট করিয়া ফেলে। স্বাধীনতাপূজক ইংরেজ আপন প্রজাদিগের অধীনদশা হইতে সেই হীনতার কলঙ্ক যথাসম্ভব অপনয়ন করিয়া আমাদিগকে মসুয়ত্বের শিক্ষা দিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন । আমরা বিজিত র্তাহার বিজেতা, আমরা দুর্বল র্তাহারা সবল ইহা তাহারা পদে পদে স্মরণ করাইয়া রাখেন নাই। এতদূর পর্যন্তও ভুলিতে দিয়াছিলেন যে, আমরা মনে করিয়াছিলাম ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের মতুয়ত্বের স্বাভাবিক অধিকার । আজ সহসা জাগ্রত হইয়া দেখিতেছি দুর্বলের কোনো অধিকারই নাই। আমরা যাহা মহন্তমাজেরই প্রাপ্য মনে করিয়াছিলাম তাহা দুর্বলের প্রতি প্রবলের স্বেচ্ছাধীন অঙ্গগ্রহ মাত্র। আমি আজ ষে এই সভাস্থলে দাড়াইয়া একটিমাত্র শব্বোচ্চারণ করিতেছি তাহাতে আমার মন্থক্টোচিত গর্বাচুভব করিবার কোনো কারণ নাই,—দোষ