পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 রবীন্দ্র-রচনাবলী দেখিতেছি। ইংলণ্ড সমস্ত ইংরেজকে অন্ন দিতে পারে না—ভারতবর্ষে তাহাঙ্গের জন্ত অন্নসত্র খোলা থাকা আবশ্যক। একটি জাতির অল্পের ভার অনেকটা পরিমাণে আমাদের স্বন্ধে পড়িয়াছে ; সেই অন্ন নানারকম আকারে নানারকম পাত্রে জোগাইতে হইতেছে। যদি সপ্তম এডোআর্ড যথার্থই আমাদের দিল্লির সিংহাসনে রাজা হইয়া বসিতেন,* তবে তাহাকে গিয়া বলিতে পারিতাম যে, হুজুর, অল্পের যদি বড়ো বড়ো গ্রাস সমস্তই বিদেশী লোকের পাতে পড়ে, তবে তোমার রাজা টেকে কী করিয়া । তখন সম্রাটও বলিতেন, তাইতো আমার সাম্রাজ্য হইতে আমার ভোগের জন্য যাহা গ্রহণ করি তাহা শোভা পায়, কিন্তু তাই বলিয়া বারে ভূতে মিলিয়া পাত পাড়িয়া বসিলে চলিবে কেন ? তখন আমার রাজ্য বলিয়া তাহার দরদ বোধ হইত এবং অন্যের লুন্ধহস্ত ঠেকাইয়া রাথিতেন । কিন্তু আজ প্রত্যেক ইংরেজই ভারতবর্ষকে ‘আমার রাজ্য’ বলিয়া জানে । এ-রাজ্যে তাহদের ভোগের খর্বত ঘটিতে গেলেই তাহারা সকলে মিলিয়া এমনি কলরব তুলিবে যে, তাহদের স্বদেশীয় কোনো আইনকৰ্তা এ-সম্বন্ধে কোনো বদল করিতে পরিবেই না । এই আমাদের প্রকাও বহুসহস্রমুখবিশিষ্ট রাজার মূপের গ্রাসে ভাগ বসাইবার জন্ত তাহারই কাছে দরবারে যাওয়া নিফল, এ-কথা একটু ভাবিয়া দেখিলেই বুঝা যায় । মোটকথা,—একটা আস্ত জাত নিজের দেশে বাস করিয়া অন্য দেশকে শাসন করিতেছে ইতিপূর্বে এমন ঘটনা ইতিহাসে ঘটে নাই। অত্যন্ত ভালো রাজা হইলেও এ-রকম অবস্থায় রাজার বোঝা বহন করা দেশের পক্ষে বড়ো কঠিন। মুখ্যত অন্ত দেশের এবং গৌণত আপনার স্বাৰ্থ যে-দেশকে একসঙ্গে সামলাইতে হয়, তাহার অবস্থা বড়োই শোচনীয়। যে-দেশের ভারকেন্দ্র নিজের এতটা বাহিরে পড়িয়াছে সে মাথা তুলিবে কী করিয়া ? না হয় চুরি ডাকাতি বন্ধ হইল, না হয় আদালতে অত্যন্ত স্বল্প সুবিচারই ঘটিয়া থাকে, কিন্তু বোঝা নামাইব কোথায় ? অতএব কনগ্রেসের যদি কোনো সংগত প্রার্থনা থাকে তবে তাহা এই যে, সম্রাট এড়োআর্ডের পুত্রই হউন, স্বয়ং লর্ড কার্জন বা কিচেনারই হউন, অথবা ইংলিশম্যানপায়োনিয়রের সম্পাদকই হউন, ভালে মন্দ বা মাঝারি যে-কোনো একজন ইংরেজ বাছিয়া পালামেণ্ট আমাদের রাজা করিয়া দিল্লির সিংহাসনে বসাইয়া দিন। একটা দেশ যতই রসালে হউক না, একজন রাজাকেই পালিতে পারে, দেশশুদ্ধ রাজাকে পারে না । ల్సిన