পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা প্রজা 886. পথ ও পাথেয় জেলে প্রতিদিন জাল ফেলে তাহার জালে মাছ ওঠে। একদিন জাল ফেলিতেই হঠাৎ একটা ঘড়া উঠিল, এবং ঘড়ার মুথ যেমন খুলিল অমনি তাহার ভিতর হইতে পুঞ্জ পুঞ্জ ধোয়ার আকার ধরিয়া একটা দৈত্য বাহির হইয়া পড়িল, আরব্য উপস্তাসে এমনি একটা গল্প আছে। f আমাদের খবরের কাগজ প্রতিদিন পবর টানিয়া আনে ; কিন্তু তাহার জালে যে সেদিন এমন একটা ঘড়া ঠেকিবে, এবং ঘড়ার মধ্য হইতে এতবড়ো একটা ত্ৰাসজনক ব্যাপার বাহির হইয়া পড়িবে তাহা আমরা কোনোদিন প্রত্যাশাও করিতে পারি নাই । নিতান্তই ঘরের দ্বারের কাছ হইতে এমন একটা রহস্য হঠাৎ চক্ষের নিমেষে উদঘাটিত হইয়া পড়িলে সমস্ত দেশের লোকের মনে যে আন্দোলন উপস্থিত হয় সেই সুদূরব্যাপী চাঞ্চল্যের সময় কথার এবং আচরণের সত্যত রক্ষা করা কঠিন হইয় উঠে। জলে যখন ঢেউ উঠতে থাকে তখন ছায়াটা আপনি বিরুত হইয়া যায়, সেজন্ত কাহাকেও দাস দিতে পারি না । অত্যন্ত ভয় এবং ভাবনার সময় আমাদের চিন্তা ও বাক্যের মধ্যে সহজেই বিকলতা ঘটে অথচ ঠিক এইরূপ সময়েই অবিচলিত এবং নির্বিকার সত্যের প্রয়োজন সকলের চেয়ে বেশি। প্রতিদিন অসত্য ও অধসত্য আমাদের তত গুরুতর অনিষ্ট করে না কিন্তু সংকটের দিনে তাহার মতো শক্র আর কেহ নাই । অতএব ঈশ্বর করুন, আজ যেন আমরা ভয়ে, ক্রোধে, আকস্মিক বিপদে,দুর্বল চিত্তের অতিমাত্র আক্ষেপে আত্মবিশ্বত হইয়া নিজেকে বা অন্তকে ভুলাইবার জন্য কেবল কতকগুলা ব্যৰ্থ বাক্যের ধুলাউড়াইয়া আমাদের চারিদিকের আবিল আকাশকে আরও অস্বচ্ছ করিয়া না তুলি । তীব্র বাক্যের দ্বারা চাঞ্চল্যকে বাড়াইয়া তোলা হয়, ভয়ের দ্বারা সত্যকে কোনোপ্রকারে চাপা দিবার প্রবৃত্তি জন্মে—-অতএব আদ্যকার দিনে হৃদয়াবেগপ্রকাশের উত্তেজনা সংবরণ করিয়া যথাসম্ভব শাস্তভাবে যদি বর্তমান ঘটনাকে বিচার না করি, সত্যকে আবিষ্কার ও প্রচার না করি তবে আমাদের আলোচনা কেবল যে ব্যর্থ হইবে তাহা নহে, তাহাতে অনিষ্ট ঘটবে। আমাদের হীনাবস্থা বলিয়াই উপস্থিত বিভ্রাটের সময় কিছু অতিরিক্ত ব্যগ্রতার সহিত তাড়াতাড়ি অগ্রসর হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে ইচ্ছা করে, “আমি ইহার মধ্যে