পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8@ぐう রবীন্দ্র-রচনাবলী মর্মান্তিক করুণাবহ ব্যাপার জগতে আর কী আছে। এই প্রকার দুশ্চেষ্টা অনিবাৰ ব্যর্থতার মধ্যে লইয়া যাইবেই, তথাপি ইহাকে আমরা পরিহাস করিতে পারিব না । ইহার মধ্যে মানবপ্রকৃতির যে পরমদুঃখকর অধ্যবসায় আছে তাহ পৃথিবীর সর্বত্রই সৰ্বকালেই নানা উপলক্ষ্যে নানা অসম্ভব প্রত্যাশায় অসাধ্যসাধনে বারংবার স্থপক্ষ পতঙ্গের ন্যায় নিশ্চিত পরাভবের বহ্নিশিখায় অন্ধভাবে বাপ দিয়া পড়িতেছে। যাই হ’ক, যেমন করিয়াই হ’ক, শক্তির অভিমান আঘাত পাইয়া জাগিয়া উঠিলে সেটা জাতির পক্ষে যে অনিষ্টকর, তাহা বলা যায় না । তবে কিনা বিরোধের ক্রুদ্ধ আবেগের দ্বারা আমাদের এই উদ্যম হঠাৎ আবিভূত হইয়াছে বলিয়াই আমাদের মধ্যে কেহ কেহ দেশের শক্তিকে বিরোধের মূর্তিতেই প্রকাশ করিবার দুবুদ্ধি অস্তরে পোষণ করিতেছেন । কিন্তু যাহারা সহজ অবস্থায় কোনোদিন স্বাভাবিক অমুরাগের দ্বারা দেশের হিতাঙ্গুষ্ঠানে ক্রমান্বয়ে অভ্যস্ত হয় নাই, যাহার উচ্চসংকল্পকে বহুদিনের ধৈর্ষে নানা উপকরণে নানা বাধাবিস্ত্রের ভিতর দিয়া গড়িয়া তুলিবার কাজে নিজের প্রকৃতিকে প্রস্তুত করে নাই, অনেকদিন ধরিয়া রাষ্ট্ৰচালনার বৃহং কার্ধক্ষেত্র হইতে দুর্ভাগ্যক্রমে বঞ্চিত হইয়। যাহারা ক্ষুদ্র স্বার্থের অনুসরণে সংকীর্ণভাবে জীবনের কাজ করিয়া আসিয়াছে তাহার। হঠাং বিষম রাগ করিয়৷ এক নিমেষে দেশের একটা মস্ত হিত করিয়া ফেলিবে ইহা কোনোমতেই সম্ভবপর হইতে পারে না । ঠাণ্ডার দিনে নৌকার কাছেও ঘেঁধিলাম না, তুফানের দিনে তাড়াতাড়ি হাল ধরিয়া অসামান্ত মাঝি বলিয়া দেশে বিদেশে বাহবা লইব এইরূপ আশ্চর্য ব্যাপার স্বপ্নে ঘটাই সম্ভব । অতএব আমাদিগকেও কাজ একেবারে সেই গোড়ার দিক হইতেই শুরু করিতে হুইবে । তাহাতে বিলম্ব হইতে পারে—বিপরীত উপায়ে আরও অনেক বেশি বিলম্ব হইবে । মানুষ বিস্তীর্ণ মঙ্গলকে স্বষ্টি করে তপস্তাদ্বারা । ক্রোধে বা কামে সেই তপস্ত ভঙ্গ করে, এবং তপস্তার ফলকে একমুহূর্তে নষ্ট করিয়া দেয়। নিশ্চয়ই আমাদের দেশেও কল্যাণময় চেষ্টা নিভৃতে তপস্যা করিতেছে ; দ্রুত ফললাভের লোভ তাহার নাই, সাময়িক আশাভঙ্গের ক্রোধকে সে সংযত করিয়াছে ; এমন সময় আজ অকস্মাং ধৈর্যহীন উন্মত্তত যজ্ঞক্ষেত্রে রক্তবৃষ্টি করিয়া তাহার বহুদুঃখসঞ্চিত তপস্তার ফলকে কলুষিত করিয়া নষ্ট করিবার উপক্রম করিতেছে। ক্রোধের আবেগ তপস্তাকে বিশ্বাসই করে না ; তাহাকে নিশ্চেষ্টত বলিয়া মনে করে, তাহাকে নিজের আশু উদ্দেগুসিদ্ধির প্রধান অন্তরায় বলিয়া ঘৃণা করে ; উংপাতের দ্বারা সেই তপঃসাধনাকে চঞ্চল সুতরাং নিফল করিবার জন্ত উঠিয়া-পড়িয়া প্রবৃত্ত হয়। ফলকে পাকিতে দেওয়াকেই সে ঔদাসীন্ত বলিয়া জ্ঞান করে, টান দিয়া