পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা প্রজা 84 సె আপনিই সমস্ত হইয়া যাইবে, মজুরদের কাজ মজুররাই করিবে কিন্তু আমরা যখন চালক তখন আমরা কেবল এঞ্জিনে দমই চড়াইতে থাকিব । এ-পর্যন্ত যাহারা সহিষ্ণুতা রক্ষা করিতে পারিয়াছেন তাহারা হয়তো আমাকে এই "প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবেন, তবে কি বাংলাদেশের সর্বসাধারণের মধ্যে যে-উত্তেজনার উদ্রেক হইয়াছে তাহ হইতে কোনো শুভফল প্রত্যাশা করিবার নাই ? নাই এমন কথা আমি কখনোই মনে করি না । অসাড় শক্তিকে সচেষ্ট সচেতন করিয়া তুলিবার জন্য এই উত্তেজনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সচেতন করিয়া তুলিয়া তাহার পরে কী করিতে হুইবে ? কাজ করাইতে হুইবে, না মাতাল করিতেই হইবে ? যে-পরিমাণ মদে ক্ষীণপ্রাণকে কাজের উপযোগী করিয়া তোলে তাহার চেয়ে বেশি মদে পুনশ্চ তাহার কাজের উপযোগিতা নষ্ট করিয়া দেয় ; যে-সকল সত্যকর্মে ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন সে-কাজে মাতালের শক্তি এবং অভিরুচি বিমুখ হইয়া উঠে । ক্রমে উত্তেজনাই তাহার লক্ষ্য হয় এবং সে দায়ে পড়িয়া কাজের নামে এমন সকল অকাজের স্বষ্টি করিতে থাকে যাহা তাহার মত্ততারই আন্তকুল্য করিতে পারে । এই সকল উংপাত-ব্যাপারকে বস্তুত তাহারা মাদকস্বরূপেই ব্যবহার করে অথচ তাহাকে স্বদেশহিত নাম দিয়া উত্তেজনাকে উচ্চমুরেই বাধিয়া, রাখে। হৃদয়াবেগজিনিসটা উপযুক্ত কাজের দ্বারা বহিমুখ ন হইয়া যখন কেবলই অন্তরে সঞ্চিত ও বর্ধিত হইতে থাকে তখন তাহ বিষের মতে কাজ করে—তাহার অপ্রয়োজনীয় উদ্যম আমাদের স্বায়ুমণ্ডলকে বিকৃত করিয়া কুৰ্মসভাকে নৃত্যসভা করিয়া তোলে। ঘুম হইতে জাগিয়া নিজের সচল শক্তিকে সত্য বলিয়া জানিবার জন্য প্রথম ষে একটা উত্তেজনার আঘাত আবশ্যক তাহাতে আমাদের প্রয়োজন ছিল। মনে নিশ্চয় স্থির করিয়াছিলাম, ইংরেজ জন্মান্তরের সুকৃতি এবং জন্মকালের শুভগ্ৰহম্বরূপ আমাদের কর্মহীন জোড়করপুটে আমাদের সমস্ত মঙ্গল আপনি তুলিয়া দিবে। বিধাতানির্দিষ্ট আমাদের সেই বিনাচেষ্টার সৌভাগ্যকে কখনো বা বন্দনা করিতাম কখনো বা তাহার সঙ্গে কলহ করিয়া কাল কাটাইতাম। এই করিতে করিতে মধ্যাহ্নকালে যখন সমস্ত জগং আপিস করিতেছে তখন আমাদের মুখনিদ্রা প্রগাঢ় হইতেছিল । এমন সময় কোথা হইতে একটা আঘাত লাগিল, ঘুমের ঘোরও কাটিল, আগেকার মতো পুনশ্চ মুখস্বপ্ন দেখিবার জন্য নয়ন মুদিবার ইচ্ছাও রহিল না, কিন্তু আশ্চর্ষ এই, আমাদের সেই স্বপ্নের সঙ্গে জাগরণের একটা বিষয়ে মিল রহিয়াই গেল। তখন আমরা নিশ্চিন্ত হইয়া ছিলাম যে, চেষ্টা না করিয়াই আমরা চেষ্টার ফল পাইতে থাকিব, এখনও ভাবিতেচি ফল পাইবার জন্য প্রচলিত পথে চেষ্টাকে