পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

чр রাজা প্রজা 8ጫጫ প্রয়োজন উপস্থিত হইল সেদিন সে ছুরি লইয়া তাহা কাটিল। একদিন ফ্রান্সের সম্মুখে একটি সমস্ত এই ছিল যে, সেখানে শাসরিতার দল ও শাসিতের দল যদিচ একই জাতিভুক্ত তথাপি তাহাজের পরম্পরের জীবনযাত্রা ও স্বার্থ এতই সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ হইয় উঠিয়াছিল ষে সেই অসামগ্রস্তের পীড়ন মানুষের পক্ষে দুৰ্বহ হইয়াছিল। এই কারণে এই আত্মবিচ্ছেদকে দূর করিবার জন্ত ফ্রান্সকে রক্তপাত করিতে হইয়াছিল। বাহত দেখিতে গেলে, সেই আমেরিকা ও ফ্রান্সের সমস্তার সঙ্গে ভারতবর্ষের মিল আছে। ভারতবর্ষেও শাসয়িতা ও শাসিত পরস্পর অসংলগ্ন। তাহদের পরস্পর সমঅবস্থা ও সমবেদনার কোনো যোগই নাই। এমন স্থলে শাসনপ্রণালীর মধ্যে সুব্যবস্থার অভাব না ঘটিতে পারে --কিন্তু কেবলমাত্র ব্যবস্থার অপেক্ষ মানুষের প্রয়োজন অনেক বেশি। যে-অনন্দে মাহুষ বঁচে এবং মানুষ বিকাশ লাভ করে, তাহা কেবল আইনআদালত সুপ্রতিষ্ঠিত ও ধনপ্রাণ মুরক্ষিত হওয়া নহে। ফল কথা, মানুষ আধ্যাত্মিক জীব-তাহার শরীর আছে, মন আছে, হৃদয় আছে—তাহাকে তৃপ্ত করিতে গেলে তাহার সমস্তকেই তৃপ্ত করিতে হয়—যে-কোনো পদার্থে সজীব সর্বাঙ্গণতার অভাব আছে তাহাতে সে পীড়িত হইবেই —তাহাকে কোন জিনিস দেওয়া গেল সেই হিসাবটাই তাহার পক্ষে একমাত্র হিসাব নহে, তাহাকে কেমন করিয়া দেওয়া হইল সেই হিসাবট আরও বড়ো হিসাব । উপকার তাহার পক্ষে বোঝা হইয়া উঠে যদি সেই উপকারের সঙ্গে সঙ্গে আত্মশক্তির উপলব্ধি না থাকে। সে অত্যন্ত কঠিন শাসনও নীরবে সহ করিতে পারে, এমন কি স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয় তাহাকে বরণ করিতে পারে যদি তাহার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার আনন্দ থাকে । তাই বলিতেছিলাম, একমাত্র সুব্যবস্থা মানুষকে পূর্ণ করিয়া রাখিতে পারে না। অথচ যেখানে শাসরিত ও শাসিত পরম্পর দূরবর্তী হইয়া থাকে, উভয়ের মাঝখানে প্রয়োজনের অপেক্ষ উচ্চতর আত্মীয়তর কোনো সম্পর্ক স্থাপিত হইতে বাধা পায়, সেখানে রাষ্ট্রব্যাপার যদি অত্যন্ত ভালোও হয় তবে তাহা বিশুদ্ধ আপিস-আদালত এবং নিতান্তই আইনকান্থন ছাড়া আর কিছু হইতেই পারে না। কিন্তু তৎসত্ত্বেও মানুষ কেন ষে কেবলই ক্লশ হইতে থাকে, তাহার অন্তর বাহির কেন যে আনন্দহীন হইয়া উঠে তাহ কর্তা কিছুতেই বুঝিতে চান না, কেবলই রাগ করেন—এমন কি, ভোক্তাও ভালো করিয়া নিজেই বুঝিতে পারে না। অতএব শাসস্থিতা ও শাসিত পরম্পর বিচ্ছিন্ন থাকাতে ষে জীবনহীন গুৰু শাসনপ্রণালী ঘটা একেবারেই জনিবাৰ্ধ, ভারতের ভাগ্যে তাহা ঘটিয়াছে সে-কথা কেহই অস্বীকার করিতে পারে না । তাহার পরে অষ্টাদশ শতাব্দীর ফ্রান্সের সঙ্গে বর্তমান ভারতের একটা মিল