পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমূহ 8వ) হইয়াছে। এইরূপে শরীর যখন অন্নাভাবে হীনবল এবং পানীয় জল যখন শোধনাভাবে রোগের নিকেতন, তখন বঁচিবার উপায় কী ? এইরূপে প্লেগও সহজেই আমাদের দেশ অধিকার করিয়াছে—কোথাও গে বাধা পাইতেছে না, কারণ পুষ্টি-অভাবে *ञांभांदमब्र श्रृंद्रौब्र चब्रक्रिउ । পুষ্টির অভাব ঘটিবার প্রধান কারণ, নানা নূতন নূতন প্রণালীষোগে অন্ন বাহিরের দিকে প্রবাহিত হইয়া চলিয়াছে—-আমরা যাহা খাইয়া এতদিন মানুষ হইয়াছিলাম, তাহ ষথেষ্টপরিমাণে পাইতেছি না । আজ পাড়াগায়ে যান, সেখানে দুধ দুর্লভ, যি দুমূল্য, তেল কলিকাতা হইতে আসে, তাহাকে পূর্ব-অভ্যাসবশত সরিষার তেল বলিয়া নিজেকে সান্ধনা দিই—তা ছাড়া, যেখানে জলকষ্ট সেখানে মাছের প্রাচুর্য নাই, সে-কথা বলা বাহুল্য। সস্তার মধ্যে সিংকোন সস্ত হইয়াছে। এইরূপে একদিনে নহে, দিনে দিনে সমস্ত দেশের জীবনীশক্তির মূলসঞ্চয় ক্রমে ক্রমে ক্ষয় হইয়া যাইতেছে। যেমন মহাজনের কাছে যখন প্রথম দেনা করিতে আরম্ভ করা যায়, তপনও শোধ করিবার সম্বল ও সম্ভাবনা থাকে ; কিন্তু সম্পত্তি যপন ক্ষীণ হইতে থাকে, তপন ষে-মহাজন একদা কেবল নৈমিত্তিক ছিল, সে নিত্য হইয়া উঠে—আমাদের দেশেও ম্যালেরিয়া প্লেগ ওলাউঠা দুর্ভিক্ষ একদিন আকস্মিক ছিল, কিন্তু এখন ক্রমে আর কোনোকালে তাহাদের দেন। শোধ করিবার উপায় দেখা যায় না, আমাদের মূলধন ক্ষয় হইয়া আসিয়াছে, এখন তাহারা আর কেবল ক্ষণে ক্ষণে তাগিদ করিতে আসে না, তাহারা আমাদের জমিজমাতে আমাদের ঘরবাড়িতে নিত্য হইয়া বসিয়াছে। বিনাশ ষে এমনি করিয়াই ঘটে, বংসরে বংসরে তাহার কি হিসাব পাওয়া যাইতেছে না ? - এমন অবস্থায় রাজার মন্ত্রণাসভায় দুটো প্রশ্ন উত্থাপন করিতে ইচ্ছা কর যদি তো করে, তাহাতে আমি আপত্তি করিব না। কিন্তু সেইখানেই কি শেষ ? আমাদের গরজ কি তাহার চেয়ে অনেক বেশি নহে ? ঘরে আগুন লাগিলে কি পুলিসের থানাতে খবর পাঠাইয়া নিশ্চিন্তু থাকিবে ? ইতিমধ্যে চোখের সামনে যখন স্ত্রীপুত্র পুড়িয়া মরিবে, তখন দারোগার শৈথিল্যসম্বন্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নালিশ করিবার জন্ত বিরাট বেশি । আমরা যে মরিতেছি। আমাদের অভিমান করিবার, কলহ করিবার, অপেক্ষ করিবার আর অবসর নাই। যাহা পারি, তাহাই করিবার জন্য এখনই আমাদিগকে কোমর বাধিতে হইবে। চেষ্টা করিলেই যে সকল সময়েই সিদ্ধিলাভ হয়, তাহা না হইতেও পারে, কিন্তু কাপুরুষের নিফলতা যেন না ঘটতে দিই—চেষ্ট না করিয়া যে-ব্যর্থত, তাহ পাপ, তাহা কলঙ্ক। *