পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ ৪২ রবীন্দ্র-রচনাবলী সীমা সেখানে পৌছিয়া তাহারা যেদিন দেখিবেন বাহিরের ক্ষুদ্র দানে অস্তরের গভীর দৈন্ত কিছুতেই ভরিয়া উঠে না, যখন বুঝিবেন শক্তিলাভ ব্যতীত লাভ নাই এবং ঐক্য ব্যতীত সে-লাভ অসম্ভব, যখন জানিবেন, যে-একদেশে আমরা জন্মিয়াছি সেই দেশের ঐক্যকে খণ্ডিত করিতে থাকিলে ধর্মহানি হয় এবং ধর্মহানি হইলে কখনোই স্বার্থরক্ষা হইতে পারে না তখনই আমরা উভয় ভ্ৰাতায় একই সমচেষ্টার মিলনক্ষেত্রে আসিয়া হাত ধরিয়া দাড়াইব । ষাই হউক, হিন্দু ও মুসলমান, ভারতবর্ষের এই দুই প্রধান ভাগকে এক রাষ্ট্ৰসম্মিলনের মধ্যে বাধিবার জন্য যে ত্যাগ, ষে সহিষ্ণুতা, যে সতর্কতা ও আত্মদমন আবশুক তাহ আমাদিগকে অবলম্বন করিতে হইবে। এই প্রকাও কর্মখণই যখন আমাদের পক্ষে যথেষ্ট তখন দোহাই সুবুদ্ধির, দোহাই ধর্মের, প্রাণধর্মের নিয়মে দেশে যে নূতন নূতন দল উঠিবে তাহারা প্রত্যেকেই এক-একটি বিরোধক্কপে উঠিয় যেন দেশকে বহুভাগে বিদীর্ণ করিতে না থাকে ; তাহারা যেন একই তরুকাণ্ডের উপর নব নব সতেজ শাখার মতো উঠিয়া দেশের রাষ্ট্ৰীয় চিত্তকে পরিণতিদান করিতে থাকে। পুরাতন দলের ভিতর দিয়া যখন একটা নূতন দলের উদ্ভব হয় তখন তাহাকে প্রথমটা অনাহূত বলিয়া ভ্রম হয়। কার্যকারণপরম্পরার মধ্যে তাহার যে একটা অনিবার্ষ স্থান আছে অপরিচয়ের বিরক্তিতে তাহা আমরা হঠাং বুঝিতে পারি না । এই কারণে নিজের স্বত্ব প্রমাণের চেষ্টায় নূতন দলের প্রথম অবস্থায় স্বাভাবিকতার শান্তি থাকে না, সেই অবস্থায় আত্মীয় হইলেও তাহাকে বিরুদ্ধ মনে হয় । কিন্তু এ-একথা নিশ্চিত সত্য যে, দেশে নৃতন দল, বীজ বিদীর্ণ করিয়া অঙ্কুরের মতে, বাধা ভেদ করিয়া স্বভাবের নিয়মেই দেখা দেয়। পুরাতনের সঙ্গেই এবং চতুর্দিকের সঙ্গে তাহার অস্তরের সম্বন্ধ আছে । এই তো আমাদের নূতন দল ; এ তো আমাদের আপনার লোক। ইহাদিগকে লইয়া কখনো ঝগড়াও করিব আবার পরক্ষণেই সুখে দুঃখে, ক্রিয়াকমে ইহাদিগকেই কাছে টানিয়া একসঙ্গে র্কাধ মিলাইয়া কাজের ক্ষেত্রে পাশাপাশি দাড়াইতে হইবে । কিন্তু ভ্রাতৃগণ, একট্ৰিমিস্ট, বা চরমপন্থী, বা বাড়াবাড়ির দল বলিয়া দেশে একটি দল উঠিয়াছে, এইরূপ ষে একটা রটন গুনা যায়, সে-দলট কোথায় ? জিজ্ঞাসা করি, এ-দেশে সকলের চেয়ে বড়ো এবং মূল একট্ৰিমিস্ট কে ? চরমপন্ধিত্বের ধর্মই এই যে, একদিক চরমে উঠিলে অন্যদিক সেই টানেই আপনি চরমে চড়িয়া যায় । বঙ্গবিভাগের জন্ত সমস্ত বাংলাদেশ যেমন বেদন অঙ্গভব করিয়াছে এবং যেমন দারুশ দুঃখভোগের দ্বারা তাহা প্রকাশ করিয়াছে ভারতবর্বে এমন বোধ হয় আর কখনো হয়