পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& e 9 t রবীন্দ্র-রচনাবলী t Wor অসুবিধা ও আশঙ্ক আছে তাহ মানিতেই হইবে, কিন্তু সেই সঙ্গে এইটুকু আশার কথা না মনে করিয়া থাকিতে পারি না যে, বহুকালের অবসাদের পরেও স্বভাব বলিয়া একটা পদার্থ এখনও আমাদের মধ্যে রহিয়া গেছে ; প্রবলভাবে কষ্ট পাইবার ক্ষমতা এখনও আমাদের যায় নাই—এবং জীবনধর্মে ষে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার নিয়ম বর্তমান এখনওঁ আমাদের মধ্যে তাহা কাজ করিতেছে । চরমনীতি বলিতেই বুঝায় হালছাড়া নীতি, সুতরাং ইহার গতিটা ষে কপন কাহাকে কোথায় লইয়া গিয়া উত্তীর্ণ করিয়া দিবে তাহা পূর্ব হইতে কেহ নিষ্কৃিতরূপে বলিতে পারে না । ইহার বেগকে সর্বত্র নিয়মিত করিয়া চলা এই পন্থার পথিকদের পক্ষে একেবারেই অসাধ্য। তাহাকে প্রবর্তন করা সহজ, সংবরণ করাই কঠিন। এই কারণেই আমাদের কতৃপক্ষ যখন চরমনীতিতে দম লাগাইলেন তখন তাঙ্কার ষে এতদূর পর্যন্ত পৌছিবেন তাই মনেও করেন নাই। আজ ভারতশাসনকার্যে পুলিসের সামান্ত পাহারাওআল হইতে ন্তায়দণ্ডধারী বিচারক পর্যন্ত সকলেরই মধ্যে স্থানে স্থানে ষে অসংযম ফুটিয়া বাহির হইতেছে, নিশ্চয়ই তাহা ভারতশাসনের কর্ণধারগণের অভিপ্রেত নহে। কিন্তু গবর্মেন্ট তো একটা অলৌকিক ব্যাপার নহে, শাসনকাৰ্য যাহাদিগকে দিয়া চলে তাহার তো রক্তমাংসের মাতুষ, এবং ক্ষমতা-মত্ততাও সেই মানুষগুলির প্রকৃতিতে অল্পাধিক পরিমাণে প্রবেশ করিয়াছে। যে-সময়ে প্রবীণ সারথির প্রবল রাশ ইহাদের সকলকে শক্ত করিয়া টানিয়া রাখে তখনও যদিচ ইহাদের উচ্চগ্ৰীব যথেষ্ট বক্র হইয়া থাকে তথাপি সেটা রাজবাহনের পক্ষে অশোভন হয় না ; কিন্তু তখন ইহার মোটের উপরে সকলেই এক সমান চালে পা ফেলে ; তখন পদাতিকের দল একটু যদি পাশ কাটাইয়া চলিতে পারে তবে তাহাদের আর অপঘাতের আশঙ্কা থাকে না । কিন্তু চরমনীতি যখনই রাশ ছাড়িয়া দেয় তখনই এই বিরাট শাসনতন্ত্রের মধ্যে অবারিত জীবপ্রকৃতি দেখিতে দেখিতে বিচিত্র হইয়া উঠে। তখন কোন পাহারাওআলায় যটি যে কোন ভালোমানুষের কপাল ভাঙিবে এবং কোন বিচারকের হাতে আইন যে কিরূপ ভয়ংকর বক্রগতি অবলম্বন করিবে তাহা কিছুই বুঝিবার উপায় থাকে না। তখন প্রজাদের মধ্যে যে বিশেষ অংশ প্রশ্রয় পায় তাহারাও বুঝিতে পারে না তাহাজের প্রশ্রয়ের সীমা কোথায় । চতুর্দিকে শাসননীতির এইরূপ অদ্ভূত দুর্বলতা প্রকাশ হইতে থাকিলে গবর্মেন্ট নিজের চালে নিজেই কিছু কিছু লজ্জাবোধ করিতে থাকেন –তখন লজানিবারণের কমিশন রিপোর্টের তালি দিয়া শাসনের ছিন্নতা ঢাকিতে চায়, বাছার আর্ত তাহাদিগকে মিথুক বলির অপমানিত করে এবং যাহার উচ্ছম্বল তাহাদিগকেই উৎপীড়িত বলিয়া মার্জন করে। কিন্তু এমন করিয়া লঙ্গ কি ঢাকা পড়ে ? অথচ