পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১২ রবীন্দ্র-রচনাবলী সেইজন্যই আমাদের সম্বন্ধে তাহাদের পরিমাণবোধ একেবারেই চলিয়া গেছে। সেইজন্তই পনেরো বৎসরের একটি ইস্কুলের ছেলেরও একটু তেজ দেখিলে তাহারা জেলের মধ্যে তাহাকে বেত মারিতে পারে ; মানুষ সামান্ত একটু নড়িলে-চড়িলেই পুনিটিভ পুলিসের চাপে তাহাকে সম্পূর্ণ নিশ্চল করিয়া ফেলিতে মনে তাহাজের ধিক্কার বোধ’ হয় না ; এবং দুর্ভিক্ষে মরিবার মুখে লোকে যখন বিলাপ করিতে থাকে সেটাকে অত্যুক্তি বলিয়া অগ্রাহ করা তাহাদের পক্ষে সম্ভব হয় ; সেইজন্যই বাংলার বিভাগব্যাপারে সমস্ত বাঙালিকেই বাদ দিয়া মলে সেটাকে “সেট্ল্ড ফ্যাক্ট” বলিয়া গণ্য করিতে পারিয়াছেন । এইরূপে আচারে বিচারে এবং রাষ্ট্রবিধানে যখন দেখিতে পাই ইংরেজের খাতায় হিসাবের অঙ্কে আমরা কতবড়ে একটা শূন্য তখন ইহার পালটাই দিবার জন্য আমরাও উহাদিগকে যতদূর পারি অস্বীকার করিবার ভঙ্গি করিতে ইচ্ছা করি। কিন্তু ধাতায় আমাদিগকে একেবারে শূন্তের ঘরে বসাইয়া গেলেও আমরা তো সত্যই একেবারে শূন্ত নহি । ইংরেজের শুমায়নবিস ভুল হিসাবে যে অস্কট ক্রমাগতই হরণ করিয়া চলিতেছে তাহাতে তাহার সমস্ত পাতা দূষিত হইয়া উঠিতেছে। গায়ের জোরে হা-কে না করিলে গণিতশাস্ত্র ক্ষমা করিবার লোক নয় । একপক্ষে এই ভুল করিতেছে বলিয় রাগ করিয়া আমারও কি সেই ভুলটাই করিব ? পরের উপর বিরক্ত হইয়া নিজের উপরেই তাহার প্রতিশোধ তুলিব ? ইহা তে কাজের প্রণালী নহে । বিরোধমাত্রই একটা শক্তির ব্যয়—অনাবশ্বক বিরোধ অপব্যয় । দেশের হিতব্লতে যাহার কর্মযোগী, অত্যাবস্তক কণ্টকক্ষত র্তাহাদিগকে পদে পদে সহ করিতেই হুইবে ; কিন্তু শক্তির ঔদ্ধত্যপ্রকাশ করিবার জন্ত স্বদেশের যাত্রাপথে নিজের চেষ্টায় কাটার চাষ । করা কি দেশহিতৈষিত ! আমরা এই যে বিদেশী-বর্জনত্রত গ্রহণ করিয়াছি ইহারই দুঃখ তো আমাদের পক্ষে সামান্ত নহে। স্বয়ং রোপেই ধনী আপন ধনবৃদ্ধির পথ অব্যাহত রাখিবার জন্ত শ্রীকে কিরূপ নাগপাশে বেষ্টন করিয়া ফেলিতেছে এবং তাহ লইয়। সেখানে কতই কঠিন আঘাতপ্রতিঘাত চলিতেছে। আমাদের দেশে সেই ধনী শুধু ধনী নন জেলের দারোগা, লিভারপুলের নিমক ধাইয়া থাকে। অতএব এ-দেশের যে-ধন লইয়া পৃথিবীতে র্তাহারা ঐশ্বর্ধের চূড়ায় উঠিয়াছেন সেই ধনের রাস্তায় আমরা একটা সামান্ত বাধা দিলেও তাহারা তো জামাদিগকে সহজে ছাড়িবেন না। এমন অবস্থায় ষে-সংঘাত আমাদের সম্মুখে রহিয়াছে তাহ খেলা নহে,— তাহাতে আরাম-বিশ্রামের অবকাশ নাই, তাহাতে আমাদের সমস্ত শক্তি ও সহিষ্ণুতার